ডাইনি অপবাদে অত্যাচার ও হত্যা রুখতে নয়া আইন করতে চলেছে অসম সরকার। নতুন আইনে কোনও ব্যক্তিকে ডাইনি অপবাদ দিলে, তাকে মানসিক বা শারীরিক নিগ্রহ করলে ওয়ারেন্ট ছাড়াই পর্যন্ত হতে পারে। আর হত্যার ঘটনা ঘটলে যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা তো আইনে রয়েছেই।
আজ দিসপুর সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন। সেখানে ডাইনি অপবাদে নিগ্রহ ও হত্যা রোধে নয়া আইন আনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত খসড়া বিলটিও করে ফেলেছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
নয়া আইনে ডাইনি অপবাদে হওয়া নিগ্রহ বা হত্যার তদন্তে মানুষ বা কোনও সামাজিক সংগঠনও পুলিশকে সাহায্য করতে পারবে। ডাইনি অপবাদে অত্যাচারিত ব্যক্তিকে বা তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিও নতুন আইনে স্থান পাচ্ছে। যদি কোনও এলাকায় দলবদ্ধ ভাবে কাউকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে নিগ্রহ করা হয়, তবে অংশ নেওয়া সকলের উপর জরিমানা চাপাতে নতুন আইনে ‘গোষ্ঠীভিত্তিক জরিমানা’-র ধারাও থাকছে। বহু উপজাতি অধ্যুষিত অসমে সম্প্রতি ডাইনি অপবাদে নিগ্রহ বেড়েছে। পরিস্থিতি সামালতে রাজ্য পুরনো আইন সংশোধন করে আরও কঠোর আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজ্য থেকে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নারী পাচারও অসমে বাড়ছে। তা আটকাতে স্বরাষ্ট্র দফতর কিছু পদক্ষেপ করছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে নথিভুক্ত হতে হবে। সব কর্মীর নাম-ঠিকানা থানায় দিতে হবে। চাকরির জন্য কাউকে ভিন্ রাজ্যে পাঠাতে গেলে চাকুরি প্রার্থী ও তাঁর পরিবারের সম্মতি পত্র পুলিশকে দিতে হবে। না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বারিকুল থানার শ্যামসুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ টুডুর মা মালতি টুডুকে ‘ডাইনি’ বলে অপবাদ দিয়ে একঘরে করেছে গ্রামের কিছু মোড়ল ও জানগুরু, এমনটাই অভিযোগ দিলীপবাবুর৷ তিনি মঙ্গলবার বারিকুল থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ দিলীপবাবুর বাড়ি ওই থানার সমরপচা গ্রামে৷ অভিযুক্তরা পাঁচ জনই ওই গ্রামের৷ দিলীপবাবু জানান, এদের এক জন তাঁরই জেঠতুতো দাদা হেকিম টুডু৷ অন্যরা নির্মল সোরেন, শরৎ মান্ডি ও তাঁর দুই ছেলে রঞ্জিত ও সঞ্জিত মান্ডি৷ তাঁর অভিযোগ, যে হেতু তিনি নির্বাচিত হয়ে ‘প্রধান’ হয়েছেন, তাই ব্যক্তি-হিংসার কারণে অপদস্হ করার চেষ্টা করছে৷ বিডিও দীপঙ্কর দাস জানান, বিষয়টি জানার পরই তিনি ওই থানার ওসি ওই গ্রামে যান এবং গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘ডাইনি’ বলে কিছু নেই৷ নিছকই কুসংস্কার মাত্র৷ তিনি জানান, ১১ মার্চ ফের ওই গ্রামে ‘ডাইনি’ প্রথার বিরুদ্ধে একটি প্রচারসভার আয়োজন করা হয়েছে৷ দিলীপ জানান, কিছু দিন আগে হেকিম টুডুর মেয়ে ক্যানসারে আক্রাম্ত হয়ে মারা যায়৷ তাকে প্রথমে ভেলোর ও পরে ঠাকুরপুকুরে চিকিৎসা করা হয়৷ যখন সে ঠাকুরপুকুরে ভর্তি তখন বাড়ির লোকেরা জানগুরুদের ডাকে৷ জানগুরু ও গ্রামের কয়েক জন মোড়ল মিলে তাঁর মাকে প্রথম অপবাদ দেয়৷ কয়েক দিন আগে শরৎ মান্ডির শ্যালিকা অসুস্হ হন৷ তাঁর জন্ডিস হয়েছে বলে শোনা যায়৷ তখন ফের তাঁর মা-কে ‘ডাইনি’ অপবাদ দেওয়া হয় ও তাঁদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়৷ গ্রামের মোড়লরা তাঁকে এই বলে হুমকি দিয়েছিলেন, পুলিস ও প্রশাসনের কাছে গেলে তাঁর ভয়ঙ্কর ক্ষতি হবে৷ তিনি তখন বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ দিলীপ জানান, তিনি বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট৷ ‘ডাইনি’ ইত্যাদি তিনি বিশ্বাস করেন না৷ তিনি বলেন, তাঁদের সম্প্রদায়ের অনেকেই এ-সব বিশ্বাস করেন না৷ কিন্তু কিছু নিরক্ষর, ধান্দাবাজ মানুষ ধর্মের নামে এ-সব রটিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করেন৷ তিনি থানায় ছাড়াও বিডিও এবং সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে সব জানিয়েছেন৷ তিনি দাবি করেন, এলাকায় তিনি দারুণ জনপ্রিয়৷ তাই কারও হুমকিতে তিনি ভয় পাওয়ার পাত্র নন৷ তিনি বলেন, তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠী এই সবের পেছনে আছে৷ তিনি দলের জেলা নেতৃত্বকে সব জানিয়েছেন৷
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020