অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

ভারতে অসংগঠিত শ্রমিকবাহিনী

ভারতীয় অর্থনীতিতে বরাবরই অসংগঠিত শিল্পশ্রমিকের একটি বিশাল ভূমিকা রয়ে গিয়েছে। এনএসএসও বা জাতীয় নমুনা সমীক্ষার ২০০৯-১০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্য‌া ৪৩.৭ কোটি যেখানে সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক মাত্র ২.৮ কোটি। এই বিপুল অসংগঠিত শ্রমিকের মধ্য‌ে ২৪.৬ কোটিই কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত। ৪.৪ শতাংশ কর্মরত নির্মাণশিল্পে। বাকি অংশ বিভিন্ন পরিষেবা ক্ষেত্র ও উৎপাদন শিল্পে কর্মরত।

অসংগঠিত ক্ষেত্রে চার বিভাগ

ভারতীয় অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য হল বিপুল সংখ্য‌ায় অস্বীকৃত বা অসংগঠিত শ্রমিকের অস্তিত্ব। ২০০৭-৮-এর অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, ভারতীয় কর্মীবাহিনীর ৯৩ শতাংশই হয় স্বনিযুক্ত আর না হয় অসংগঠিত ক্ষেত্রে চাকুরিরত। পেশা, কাজের চরিত্র, বিশেষ দুর্দশাগ্রস্ত ও পরিষেবা -- এই চার বৈশিষ্ট্যের নিরিখে ভারত সরকার অসংগঠিত শ্রমশক্তিকে ভাগ করেছে।

পেশাগত বিভাগ

এই বিভাগের মধ্য‌ে পড়ে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক, ভাগচাষি, মৎস্য‌জীবী,পশুপালনে কর্মরত, বিড়ি শ্রমিক, নির্মাণকাজে কর্মরত শ্রমিক, চামড়া শ্রমিক, বননশিল্পী, হস্তশিল্পী, লবণ উৎপাদনকারী, ইটভাটা ও পাথর খাদানের শ্রমিক, তেল কল, করাত কল ইত্য‌াদি ক্ষেত্রের শ্রমিকরা।

কাজের চরিত্রগত বিভাগ

সংযুক্ত কৃষি শ্রমিক, বেগার শ্রমিক, অন্য‌ জায়গা থেকে আসা শ্রমিক, চুক্তিতে কর্মরত বা অস্থায়ী শ্রমিক এই বিভাগে পড়েন।

বিশেষ দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিক

তাড়ি বানানোর শ্রমিক, ঝাড়ুদার, মালবাহক, পশুচালিত বাহনের চালক, মালের খালাসি এই বিভাগে পড়েন।

পরিষেবাগত বিভাগ

ধাই, গৃহকর্মী, মৎস্য‌জীবী পুরুষ ও মহিলা, ক্ষৌরকর্মী, ফল ও সবজি বিক্রেতা, সংবাদপত্র বিক্রেতারা এই বিভাগে পড়েন।

এই চার বিভাগ ছাড়াও বড় অংশের অসংগঠিত শ্রমিকের অস্তিত্ব রয়ে গিয়েছে। যেমন মুচি, হামাল, হস্তশিল্পী, তাঁতশিল্পী, মহিলা দর্জি, প্রতিবন্ধী স্বনিযুক্ত মানুষ, রিকশাচালক, অটোচালক,শম শিল্পী, ছুতোর, চামড়াশ্রমিক, যন্ত্রচালিত তাঁতশিল্পী ও শহুরে গরিব মানুষ।

ভারতীয় চিত্র

  • যদিও প্রাপ্ত পরিসংখ্য‌ানের ব্যাপকতা ও তার সঠিকতার মধ্যে ফারাক থেকিএ যায়, তবু এটা বলাই যায়, দেশে কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত, নির্মাণশিল্পে কর্মরত ও গার্হস্থ কর্মে ব্য‌াপৃত অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যাই সর্বাধিক (মোট শ্রমিকের ৫২ শতাংশ)।
  • জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংগঠন (এনএসএসও) অনুযায়ী, ভারতে প্রায় তিন কোটি শ্রমিক ঘুরে ঘুরে কাজের সন্ধান করেন। এবং ২০০০ সালের পর থেকে দেশে শ্রমের বাজারে অতিরিক্ত প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ মহিলা শ্রমিক যুক্ত হয়েছেন। এর উপর প্রতি দিন ১৩ হাজার মানুষের ষাট বছর পূর্ণ হচ্ছে এবং তাঁরা গড়পরতা আরও ১৭ বছর বাঁচবেন ধরে নেওয়া যায়। দুঃখের বিষয় মাত্র ১০ শতাংশ ভারতীয় বার্ধক্য‌কালীন অবস্থার জন্য‌ সঞ্চয় করেন। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, দেশে যে সামাজিক সুরক্ষা বিধিসমূহ চালু আছে, তার আওতায় ৪৫ কোটি ৯০ লক্ষ কর্মরত মানুষের মধ্য‌ে মাত্র ৮ শতাংশ রয়েছেন।
  • জাতীয় নমুনা সমীক্ষার সর্বশেষ রিপোর্ট দেখাচ্ছে (মে ২০১১), ১৯৯৯-২০০০ এবং ২০০৪-৫ সালের মধ্যবর্তী সময়কালের তুলনায় ২০০৪-৫ এবং ২০০৯-১০-এর মধ্যবর্তী সময়ে অস্থায়ী শ্রমিক সংখ্য‌া অনেকটা বেড়ে গিয়েছে এবং নিয়মিত শ্রমিকের সংখ্যা বেশ খানিকটা কমেছে।
  • এই রিপোর্ট দেখাচ্ছে ১৯৯৯-০০ এবং ২০০৯-১০ সালের মধ্য‌ে ভারতের শ্রম বাহিনীর মধ্য‌ে বিরাট কাঠামোগত ফারাক এসে গিয়েছে। এঁদের মোটামুটি স্বনিযুক্ত, নিয়মিত ও অস্থায়ী হিসাবে ভাগ করা যায়। (অস্থায়ী শ্রমিকেরা মেয়াদি শ্রমিকদের মতো সুযোগসুবিধা ও নিরাপত্তা ভোগ করেন না। দৈনিক মজুরিতে নিযুক্ত সমস্ত শ্রমিক এবং চুক্তি শ্রমিকের কিছু অংশ এই বিভাগের অন্তর্গত।)
  • জাতীয় নমুনা সমীক্ষার এইসব রিপোর্ট প্রমাণ করে ভারতের শ্রমের বাজারে একটি বিপুল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। বেসরকারি ঘরোয়া ক্ষেত্রের কাজকর্ম বেড়ে গিয়েছে। জীবিকার গুণগত মান অনেকটাই পড়ে গিয়েছে (কাজের নিরাপত্তা ও শর্তসমূহ-সহ)। শ্রমিক সংগঠনগুলি দুর্বল হয়েছে, যৌথ দর কষাকষি ব্য‌বস্থা, অন্য‌ান্য‌ সামাজিক নিরাপত্তা ব্য‌বস্থা সমূহ উল্লেখযোগ্য‌ ভাবে কমে গিয়েছে। এর জন্য‌ অনেকাংশে দায়ী বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া এবং নিয়োগকারীদের উৎপাদন খরচ কমানোর আপ্রাণ প্রয়াস। দেখা গিয়েছে এই সব প্রক্রিয়াগুলি একে অপরের সঙ্গে ভালমতোই সম্পৃক্ত। এর ধাক্কায় মূলত শ্রমের বাজারের অনেকটাই ঘরোয়া সেক্টরে চলে গিয়েছে। এর থেকে স্পষ্ট, ভারতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ভূমিকা ও গুরুত্ব বোঝা কতটা জরুরি।
  • অনেকেই মনে করেন ভারতে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনও ভুলচুক হয়নি এবং প্রশাসনিক দিক দিয়ে যে ভাষ্য‌ই দেওয়া হোক তাকে বেদবাক্য‌ বলে ধরে নিয়েছেন। এখন বোঝা যাচ্ছে এ ব্য‌াপারে কোনও কিছুকেই বেদবাক্য‌ হিসেবে ধরার কোনও কারণ নেই। বৃদ্ধি অত্য‌ন্ত ধীর গতির, জীবিকার বর্তমান কাঠামো ক্রমবর্ধমান শ্রমিশক্তির তুলনায় অপর্যাপ্ত।

অসংগঠিত ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব

  • ভারতের শ্রম-বাজারে যে চিত্র মেলে তার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর অন্যতম অস্বীকৃত ক্ষেত্রের প্রাধান্য। যদিও দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি)ওই সেক্টরের অবদান ৫০ শতাংশ, কিন্তু মোট শ্রমশক্তির ৯০ শতাংশই এই অস্বীকৃত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিয়োজিত রয়েছে। সাব-কমিটি অন ন্য‌াশানাল কমিশন ফোর এন্টারপ্রাইজেস ইন দ্য আনঅরগানাইজড সেক্টর বা এনসিইইউএস-এর সাব কমিতির করা সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, অসংগঠিত ক্ষেত্রের জিডিপিতে অবদান ৫০ শতাংশ (এনসিইইউএস ২০০৮)।
  • অসংগঠিত শ্রমশক্তি নিয়ে জাতীয় স্তরের এই চিত্র দেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য‌ের ক্ষেত্রেই সত্য। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের একটা বড় অংশ (৬৫ শতাংশ) কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। এতে বোঝা যায় ঘরোয়া অর্থনীতিতে গ্রামীণ ক্ষেত্রের কতটা গুরুত্ব।
  • দেশে মোট কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির তুলনায় সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির হার সবসময়ই কম। এর থেকে বোঝা যায় অস্বীকৃত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের কতটা দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য‌ থেকেও দেখা যাচ্ছে স্বীকৃত ক্ষেত্রের মধ্য‌েও অস্বীকৃত/অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্য‌া বাড়ছে। এনএসএসও-র ৫৫তম রাউন্ড ও ৬১তম রাউন্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য‌ের তুলনা করে (১৯৯৯-২০০০ এবং২০০৪-৫ যথাক্রমে) এনসিইউএস ২০০৭ বলছে, আমাদের দেশ এখন ‘স্বীকৃত ক্ষেত্রের অস্বীকৃতকরণ চলছে’। সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পুরোটাই অস্বীকৃত ধরনের।
  • এটা ব্য‌াপক ভাবে স্বীকৃত যে সংগঠিত ক্ষেত্রের উৎপাদনের হার অসংগঠিত ক্ষেত্রের চেয়ে বেশি। এই অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য‌ হল, প্রকৃত মজুরির কম হার এবং কাজ ও আবাসের অত্য‌ন্ত খারাপ পরিবেশ।
  • এ ছাড়াও এই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ পাওয়ার ব্যাপারে সময়ের একটা গুরুত্ব রয়েছে। অর্থাৎ সব সময় কাজ থাকে না। বিশেষ করে খামারের কাজের ক্ষেত্রে এই জিনিস দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে বেশির ভাগই অস্থায়ী বা চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক, উৎপাদন সংগঠন ও উৎপাদন সম্পর্কের অবস্থা অত্য‌ন্ত খারাপ, কোনও সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্য‌াণমূলক বিধি নেই, সামাজিক সম্মান ও শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি পাত্তা দেওয়া হয় না, ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চনা করা হয় ইত্য‌াদি। মানব সম্পদের খারাপ মান (শিক্ষা, প্রশিক্ষিত করার সুযোগ এবং দক্ষতার দিক দিয়ে) এই ধরনের অসংগঠিত শ্রমিককে ভঙ্গুর, দুর্বল ও মালিকের সঙ্গে দরকষাকষির অনুপযুক্ত করে রেখেছে। এই কারণে এই সেক্টরের শ্রমিকরা কম খরচে কাজ উদ্ধারের উপায়ে পরিণত হয়েছে। ধরে নেওয়া হয়েছে, এদের কোথাও কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। অতএব এদের যথেচ্ছ শোষণ করা যায়। এই ক্ষেত্রের জন্য‌ কোনও কার্যকর আইন করা বা সংগঠিত কাঠামোয় এদের নিয়ে আসার চেষ্টাকে মনে করা হয় যেন এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগের বিরুদ্ধে ব্য‌বস্থা নেওয়া হচ্ছে।
  • বিশ্বায়নের আগমনের সঙ্গে এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত উৎপাদনের পুনর্সংগঠনের ফলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হল যেখানে উৎপাদন ব্য‌বস্থা একটি বিশেষ জায়গায় আবদ্ধ হয়ে পড়ল এবং তার কোনও মান রইল না। সেখানে অনেক নমনীয় শর্তে শ্রমশক্তিকে ব্য‌বহার করা শুরু হল, অস্থায়ী ও আংশিক সময়ের জন্য‌ শ্রমিক নিয়োগ বাড়ল। এই পরিস্থিতির জন্য‌ দায়ী হল, প্রতিযোগিতার বাজারে শ্রমের পিছনে খরচ কমিয়ে টিঁকে থাকার চেষ্টা। সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় এই শ্রমশক্তি কাজের নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষার দিক দিয়ে প্রচণ্ড ভঙ্গুর। প্রচলিত শ্রম সংক্রান্ত আইনে শ্রমিকদের জন্য‌ যে সব নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে তার কোনওটাই তাদের জন্য‌ প্রযোজ্য‌ নয়। এই ধরনের আধুনিক অস্বীকৃত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মধ্য‌ে নিরাপত্তার অভাব ও ভঙ্গুরতা ক্রমশ বাড়ছে। তার অন্য‌তম কারণ হল এই সেক্টরের শ্রমিকদের সংগঠিত করা ও যৌথ দরকষাকষির ব্য‌বস্থার মধ্য‌ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া নানা কারণে দুর্বল।
  • সাম্প্রতিককালে অস্বীকৃত ক্ষেত্রের ভয়াবহ বৃদ্ধি কর্মসংস্থান ও অধিকাংশ শ্রমিকের আয়ের নিরাপত্তার উপর অত্য‌ন্ত খারাপ প্রভাব ফেলেছ। একই সঙ্গে কমেছে সামাজিক কল্য‌াণ ও নিরাপত্তামূলক ব্য‌বস্থার মানও।
  • আমাদের ‘বিশ্বায়িত’ শহরগুলিতে, যেমন বেঙ্গালুরুতে ধনী ও চনমনে ভারতকে তুলে ধরা হয়। কিন্তু লক্ষ লক্ষ শ্রমিক সেখানে কায়িক শ্রমের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করেন। অসংখ্য‌ গৃহকর্মী, সিকিউরিটি গার্ড, নির্মাণকর্মী, বয়নশিল্পী, বিড়ি শ্রমিক, মুচি, আগরবাতি শ্রমিক, গাড়ির চালক ইত্য‌াদি পেশার লোকজনের জীবনের গল্প অন্য‌ রকম। তাঁদের আয় তাদের নিয়োগকর্তাদের আয়ের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়েনি। বরং মুদ্রাস্ফীতির দরুন গত আড়াই দশকে তাদের প্রকৃত রোজগার কমেছে। ফলে তাঁদের আরও দরিদ্র অবস্থায় নিমজ্জিত হতে হয়েছে।

অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের প্রধান বৈশিষ্ট্য

  • সংখ্য‌ার দিক দিয়ে অসংগঠিত শ্রমিক প্রচুর, যে কারণে ভারতের সর্বত্র তাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন।
  • যে হেতু অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ সময়ের উপর অনেকটাই নির্ভর করে তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের শ্রমিকদের কাজের নির্দিষ্ট স্থায়ী কোনও উপায় নেই। যারা এই মুহূর্তে দেখে মনে হচ্ছে, কাজে নিযুক্ত তাঁরা স্থায়ী ভাবে বা লাভজনক ভাবে কোনও কাজে নিযুক্ত নাও হতে পারেন। ফলে এটা লুকনো কাজের অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
  • কাজের জায়গা অত্যন্ত ছড়ানো-ছিটনো এবং বিচ্ছিন্ন।
  • এখানে স্থায়ী ভাবে কোনও শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের অস্তিত্ব নেই।
  • গ্রামীণ এলাকায় অসংগঠিত শ্রমিক জাতপাত এবং সম্প্রদায়ের হিসাবে প্রচণ্ড বিভক্ত। শহুরে এলাকায় এই ধরনের হিসাব অনেকটা কম হলেও একেবারে বলা যায় না। কারণ শহুরে শ্রমিকদের বেশির ভাগই গ্রাম থেকে আসা মানুষ।
  • অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা ঋণগ্রস্ত এবং বেগার শ্রমপ্রথায় যুক্ত হয়ে পড়েন। কারণ তাঁদের আয় জীবিকা নির্বাহ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।
  • অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা সমাজের অন্য‌ অংশের হাতে নির্মম শোষণের শিকার। তাঁরা স্বীকৃত ক্ষেত্রের চেয়ে অনেক কম মজুরি পান এবং তাঁদের কাজের পরিবেশও অত্য‌ন্ত খারাপ। এমনকী স্বীকৃত ক্ষেত্রের সঙ্গে উৎপাদনশীলতার দিক দিয়ে সাযুজ্য‌ রয়েছে এমন কাজের ক্ষেত্রেও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মজুরির পরিমাণ অনেকটাই কম। তাঁরা কাজের ধরন, শর্ত ও পারিশ্রমিকের দিক দিয়ে সব সময় খারাপ অবস্থানে রয়েছে।
  • অসংগঠিত ক্ষেত্রে প্রাচীন ও সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্য‌বস্থা ও উৎপাদন সম্পর্ক অতি সহজেই দেখা যায়। তারা শ্রমিককে কখনওই উচ্চ কারিগরির সুযোগ নিতে দেয় না। উৎপাদন সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটায় না। বিপুল অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা বাইরের বিশ্বের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণ। এই কারণেও তাঁরা বঞ্চনার শিকার।
  • অসংগঠিত ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের তেমন প্রভাব নেই।
  • অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য‌ তৈরি করা আইনগুলি সংগঠিত ক্ষেত্রের আইনগুলির তুলনায় অপর্যাপ্ত ও অকার্যকর।

সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা

  • ভারতে সংবিধানের খসড়া তৈরির সময় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি সপ্তম তফশিলের তৃতীয় অংশের অন্তর্গত করে কেন্দ্র ও রাজ্য‌ের যৌথ দায়িত্বের তালিকায় রাখা হয়। ভারতীয় সংবিধানে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য‌ প্রচুর নির্দেশাত্মক নীতি অন্তর্গত করা হয়। এই নীতিগুলি কাজে পরিণত করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি আইন করা হয়। যেমন, ওয়ার্কমেন্স কমপেনসেশন অ্য‌াক্ট ১৯২৩, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউটস অ্য‌াক্ট বা শ্রমবিরোধ আইন ১৯৪৭, এমপ্লয়িজ স্টেট ইনসিওরেন্স অ্য‌াক্ট বা কর্মচারী রাজ্য বিমা আইন ১৯৪৮, মিনিমাম ওয়েজেস অ্য‌াক্ট বা ন্যূনতম মজুরি আইন ১৯৪৮, দ্য কোল মাইনস প্রভিডেন্ট ফান্ডস অ্য‌ান্ড মিসলেনিয়াস প্রভিশনস অ্য‌াক্ট ১৯৪৮, দ্য এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডস অ্য‌ান্ড মিসলেনিয়াস প্রভিশন অ্য‌াক্ট ১৯৫২, দি মেটারনিটি বেনিফিট অ্য‌াক্ট বা মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন ১৯৬১, দ্য সিমেনস প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্য‌াক্ট ১৯৬৬, এবং দ্য কনট্রাক্ট লেবার অ্য‌াক্ট বা চুক্তিশ্রম আইন ১৯৭০।
  • বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা এবং সুবিধা দেওয়ার জন্য‌ সংগঠিত ক্ষেত্রের জন্য‌ পেমেন্ট অফ গ্র্য‌াচুইটি অ্য‌াক্ট ১৯৭২ এবং দ্য বিল্ডিং অ্য‌ান্ড কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স অ্য‌াক্ট ১৯৯৬ করা হয়েছ। যদিও বলা হয়েছে, এই আইনগুলি করা হয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্যও প্রযোজ্য তথাপি প্রকৃত অর্থে অসংগঠিত ক্ষেত্রের জন্য‌ এই আইনগুলির অবদান খুবই সামান্য‌।
  • অসংগঠিত শ্রমিক ও গ্রামীণ গরিবদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে খুব বেশি কাজ হয়নি, তবে ইদানীং আমাদের দেশ এ দিকে কিছুটা কাজ শুরু করেছে। কেন্দ্র ও রাজ্য‌ সরকারগুলি অসংগঠিত শ্রমিকদের স্বার্থে কিছু নির্দিষ্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
  • বহুলপ্রচারিত ২০০৫ সালের জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিরাপত্তা প্রকল্পকে (এনরেগা) এ দিকে একটি সূত্রপাত বলা যেতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রকল্পে সব রাজ্য‌ে সমান মজুরি পাওয়া যায় না। এই মজুরি কেবলমাত্র প্রকল্পে নথিভুক্ত শ্রমিকদের সর্বোচ্চ ১০০ দিনের জন্য‌ পাওয়া যায়। বছরের বাকি দিনগুলিতে কী হবে? এই আইনে গ্রামীণ ক্ষেত্রে ১০০ দিনের কাজের গ্য‌ারান্টির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শহরের গরিব মানুষদের তা হলে কী হবে?
  • সাম্প্রতিক আনঅরগাইজড সেক্টর সোশাল সিকিউরিটি অ্য‌াক্ট বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের সামাজিক নিরাপত্তা আইন ২০০৮-র দিকে তাকালে মনে হতেই পারে অসংগঠিত শিল্প শ্রমিকদের জন্য‌ এই আইনে সত্য‌িই কি কোনও ব্য‌বস্থা নেওয়ার জায়গা রয়েছ? নাকি কেবলমাত্র দেশে প্রচলিত সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্য‌বস্থাগুলি সম্পর্কে কিছু গাইড লাইন রাখা আছে। একে কী করে আইন বলা যাবে যদি না তাতে কাজের অধিকার ও পরবর্তী সুযোগ সম্পর্কে আইনি বাধ্য‌বাধকতার বিষয়টি থাকে। এই আইনে অসংগঠিত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য‌ উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা বলতে কী বোঝায় বা তার মানগুলি কী, সুবিধা গ্রহণ করা বা দেওয়ার ক্ষেত্রে কী নির্ণায়ক বৈশিষ্ট্য‌ থাকা দরকার, কোন পরিস্থিতিতে শ্রমিক বা তার পরিবার এই সুবিধা পাবেন, তহবিল কী ভাবে আসবে বা বরাদ্দ হবে, এ সব কথা কিছুই বলা নেই। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও আমাদের দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা কি পঞ্চাশ বছর আগে আইএলও কনভেনশনে যে সব বিষয় বলা হয়েছিল সেই অনুযায়ী ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা এবং আইনি অধিকার পাওয়ার যোগ্য‌তা অর্জন করেননি? সুতরাং এই আইন, যাতে বেকারত্ব, তার নিয়ন্ত্রণমূলক বিধি, মজুরি ও কাজের অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা নেই তা কেবলমাত্র অসম্পূর্ণই নয় তা নিষ্ফল হয়ে যাবে যদি সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার প্রবণতা বজায় থাকে। এই আইনে আইনগত নীতির ও উদ্দেশ্য‌ের গুরুতর অভাব রয়েছে। শেষমেশ এই আইন কেবলমাত্র চোখে ধুলো দেওয়ার বস্তুতে পরিণত হবে কারণ এর মধ্য‌ে অসংগঠিত শ্রমিকদের চাহিদার ব্য‌াপারে সমস্য‌ার সমাধান বা সুরাহা করে দেওয়ার কোনও বিষয় নেই। এমনকী ন্যূনতম মজুরি আইন ১৯৪৮-এর বিভিন্ন ধারাগুলি এতই তুচ্ছ ও অপ্রাসঙ্গিক যে বিভিন্ন রাজ্য‌ খুবই কম পরিমাণ ন্যূনতম মজুরি ধার্য করেছে। তা-ও আবার এক রাজ্য‌ থেকে অন্য‌ রাজ্য‌ে প্রচুর ফারাক রয়েছে।
  • আসলে একটি সুসংহত আইনের খুবই অভাব যেখানে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য‌ খাদ্য‌, পুষ্টি, স্বাস্থ্য‌, আবাসন, কাজের সুযোগ, আয়, জীবনের নিরাপত্তা এবং বৃদ্ধাবস্থায় জীবন ধারনের নিরপত্তার বিষয়গুলি থাকবে। এই ধরনের আইন সত্য‌িই ভারতবাসীর কাছে স্বপ্ন। তবু ভারত সরকার বড় শিল্প সংস্থার জন্য‌ লাল কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে কিন্তু অসংগঠিত শ্রমিকেদর কান্না শোনার লোক নেই। তাদের বলি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের তোষণ করা হচ্ছে।

সূত্র : কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান দফতর।

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate