সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি যখন গর্ভপাত করান, তখন কোনও জটিলতা হয় না বললেই চলে ৷ তবুও স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি স্তরে প্রশিক্ষিত কর্মী থাকা উচিত, যাঁরা গর্ভপাত সংক্রান্ত জটিলতাগুলি নির্ণয় ও সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে এবং প্রয়োজনে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে পারবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কৃত্রিম গর্ভপাতের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক গর্ভপাত সংক্রান্ত জটিলতার মতোই নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিত্সার ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯৪) দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত৷
দক্ষ চিকিত্সক যখন ভ্যাকুয়াম অ্যাসপিরেশনের (কৃত্রিম গর্ভপাতের একটি পদ্ধতি) সাহায্যে গর্ভপাত করান, তখন সাধারণত অসম্পূর্ণ গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। তবে গর্ভপাতের অন্য পদ্ধতিগুলির ক্ষেত্রে এ রকম ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। এই উপসর্গগুলির মধ্যে আছে যোনির রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ও সংক্রমণের লক্ষণ ৷ প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা থাকা উচিত যাতে তাঁরা ভ্যাকুয়াম অ্যাসপিরেশনের সাহায্যে জরায়ু আবার পরিষ্কার করে (রি-ইভ্যাকুয়েট) গর্ভপাত সম্পূর্ণ করতে পারেন। রক্তক্ষরণ বা সংক্রমণ যাতে না হয় সে দিকেও নজর রাখা উচিত।
অস্ত্রোপচার বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতি, এই দুই ক্ষেত্রেই অসফল গর্ভপাত হতে পারে। এ রকম ক্ষেত্রে মহিলাটি যদি গর্ভপাতের পর দেখাতে আসেন এবং দেখা যায় যে তখনও তাঁর গর্ভাবস্থা থেকে গেছে, তবে ভ্যাকুয়াম অ্যাসপিরেশনের সাহায্যে তাঁর গর্ভপাত করানো উচিত। গর্ভাবস্থা ৩ মাস পার হয়ে গেলে ডি অ্যান্ড সি (D&C) পদ্ধতিতে গর্ভপাত করাতে হবে ৷
ভ্রূণের কিছু অংশ জরায়ুতে থেকে গেলে, জরায়ু আঘাতপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরায়ুতে ছিদ্র থাকলে রক্তক্ষরণ (হেমারেজ) হতে পারে ৷ সে ক্ষেত্রে কারণের ওপর নির্ভর করে প্রয়োজন অনুসারে যথাযথ চিকিত্সা করা উচিত। যেমন, জরায়ু আবার পরিষ্কার (রি-ইভ্যাকুয়েট) করা ও রক্তপাত বন্ধ করার জন্য জরায়ু-সংকোচক ওষুধ দেওয়া ও গুরুতর অবস্থার ক্ষেত্রে রক্ত দেওয়া, ল্যাপরোস্কোপি বা ল্যাপরোটপি করা। রক্তক্ষরণ খুব বেশি হলে বুঝতে হবে অবস্থা জটিল। রক্তক্ষরণ হচ্ছে এমন মহিলার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সা শুরু করার ব্যবস্থা বা অন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকা উচিত৷
যথাযথ পদ্ধতিতে সুরক্ষিত গর্ভপাত করালে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণগুলি হল জ্বর বা কাঁপুনি, গর্ভাশয় বা যোনি থেকে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব নিঃসরণ, পেটে বা কোমরে ব্যথা, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা রক্তস্রাব, জরায়ুর স্পর্শকাতরতা অথবা রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা বেড়ে যাওয়া। সংক্রমণ নির্ণীত হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের উচিত তখনই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া। ভ্রূণের কিছু অংশ জরায়ুতে থেকে যাওয়ার কারণে সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে হলে গর্ভাশয় আবার পরিষ্কার (রি-ইভ্যাকুয়েট) করা দরকার। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করা আবশ্যক। দেখা গেছে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে গর্ভপাত-পরবর্তী সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। অতএব এ ক্ষেত্রে তা দেওয়া উচিত।
সাধারণত জরায়ুতে ছিদ্র থাকলে তা ধরা যায় না এবং কোনও চিকিত্সা ছাড়াই সেরে যায়। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত করাতে আসা ৭০০-রও বেশি মহিলার ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনের জরায়ুতে হওয়া ছিদ্র এত ছোট যে ল্যাপরোস্কোপি না করলে তা জানাই যেত না। ল্যাপরোস্কোপি হল নির্ণায়ক পদ্ধতি। ল্যাপরোস্কোপি পরীক্ষায় যদি ধরা পড়ে অন্ত্র, রক্তনালী বা অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে ল্যাপরোটমি করে তা ঠিক করা হয়।
গর্ভাধানের প্রথম তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাতের জন্য ভ্যাকুয়াম অ্যাসপিরেশন ও তিন মাসের পর গর্ভপাতের জন্য প্রসারণ ও পরিষ্কার, উভয় ক্ষেত্রেই সাধারণত সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার তুলনায় নির্দিষ্ট স্থানকে অসাড় করা বেশি নিরাপদ।
সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার ক্ষেত্রে খিঁচুনি ও হৃদযন্ত্র এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ হতে হবে ৷ মাদক পূর্বানুবৃত্তি জাতীয় ওষুধ হাতের কাছে মজুত রাখতে হবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/20/2020