ঋতুস্রাবের সমস্যা নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারদের বেশ কিছু পরীক্ষা করতে হতে পারে। এর মধ্যে পেলভিক পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড হতে পারে। ঋতুস্রাবের সমস্যা যা এক বারই হয়েছে বা অনেক দিন হয়নি, পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাবের সমস্যা দেখা না দিলে তা অনেক দিন পর্যন্ত অনির্ণীত থেকে যেতে পারে।
ঋতুস্রাবের সমস্যার ধরন এবং কত দিন ধরে সেই সমস্যা চলছে তার উপর এই সমস্যার চিকিৎসা নির্ভর করে। সাধারণ সমস্যা বা ছয় মাসের কম সময়ের সমস্যার জন্য আপনার ডাক্তার জীবনধারণের ধরন পরিবর্তন করার বা স্বনির্ভর নিরাময় পরামর্শ দিতে পারেন। এই সব পরামর্শের মধ্যে থাকতে পারে -
রজঃস্রাব সমস্যার জন্য বিকল্প চিকিৎসার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে -
যদি খুব বেশি বা লম্বা সময়ের জন্য রজঃস্রাবজনিত সমস্যা থাকে তবে আপনার ডাক্তারবাবু চিকিৎসার জন্য ওষুধের নির্দেশ দিতে পারেন। তার মধ্যে থাকতে পারে:
যদি কোনও গুরুতর সমস্যা ধরা পড়ে, যেমন ফাইব্রয়েড বা ক্যান্সার, তবে শল্য চিকিৎসার দরকার হতে পারে। অনেক রজঃস্রাব সমস্যা খুবই প্রচলিত এবং তা চিন্তার কারণ নয়। অনেক বিষয় ঋতুচক্রকে বিঘ্নিত করতে পারে এবং শরীরের ঋতুস্রাবের মানিয়ে নেওয়া চেষ্টার ফল হিসেবে সময়ের আগে ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাই হোক, যদি আপনার অনেক লম্বা সময় ধরে স্রাব হয়, খুব বেশি রক্তপাত হয়, রক্ত জমে যায় বা অনেক দিন ধরে ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা চলতে থাকে, তবে আপনার উচিত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা।
ডিসমেনোরিয়া হল যন্ত্রণাদায়ক স্রাবকালীন খিঁচুনি। এটি দু’ধরনের হয়। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়া। প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া হল স্রাবের সময় যন্ত্রণা। এটি ঋতুস্রাব হওয়া মহিলাদের একটি সাধারণ সমস্যা। পেলভিক (যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস) সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও স্রাব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তলপেটে খিঁচুনিকর যন্ত্রণা হলে একে ডিসমেনোরিয়া বলা হয়। সাধারণত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে। বেশি মাত্রায় ডিসমেনোরিয়ার সঙ্গে গুরুতর ঝুঁকি জড়িত। অল্পবয়সে প্রথম ঋতুস্রাব, অনেক দিন ধরে স্রাব, ধূমপান, স্থুলতা এবং মদ্যপান এর কারণ হতে পারে। ওজন কমানোর চেষ্টাও বেশি যন্ত্রণাদায়ক স্রাবের সঙ্গে জড়িত মনে করা হয়। তবে শারীরিক পরিশ্রম এই যন্ত্রণার সঙ্গে জড়িত নয়। সন্তানধারণের পর স্রাবকালীন যন্ত্রণা কমে যায় –এই ধারণার সমর্থনে কোনও গবেষণা নেই।
সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়ার যন্ত্রণা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস, জরায়ুর অতিরিক্ত সংকোচন বা অন্য কোনও রোগ থেকে হয়।
ঋতুস্রাব না হওয়াকে অ্যামেনোরিয়া বলে। অ্যামেনোরিয়া দুই রকমের হয়। প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া। প্রাইমারি অ্যামেনোরিয়া হচ্ছে এমন একটা অবস্থা যখন একজন মহিলার কখনও ঋতুস্রাব হয়নি। সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া হচ্ছে এমন একটা অবস্থা যখন অন্তত ছ’মাস ঋতুস্রাব হয়নি। সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া সাধারণত গর্ভাবস্থার জন্য হয়।
মাত্রাতিরিক্ত এবং দীর্ঘসময় ধরে রজঃস্রাব হওয়াকে মেনোরাজিয়া বলে। মেনোরাজিয়াকে হাইপার মেনোরিয়াও বলে। স্বাভাবিক ভাবে খুব বেশি রক্তস্রাব হলে তাকে মেনোরাজিয়া বলে না। সাত দিনের বেশি সময় ধরে রক্তপাত হতে থাকলে তাকে মেনোরাজিয়া বলা হয়। এই সময় বড় ডেলার আকারে জমা রক্ত সহ রজঃস্রাব হতে পারে। হরমোনের গণ্ডগোল বা গর্ভাশয়ে ফাইব্রয়েডের কারণে প্রায়ই এই সমস্যা দেখা হয়।
জরায়ুর ঝিল্লিতে ক্যান্সারকে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার বলে। এই ধরনের ক্যান্সার হলে যোনীনালি দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত হয়। এটি একটি গুরুতর সমস্যা, তবে তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে এর চিকিৎসা সম্ভব। সাধারণত ৫০ বছরের উপর মহিলা বা যাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেশি, তাদের এই ক্যান্সার হতে পারে।
ফাইব্রয়েড জরায়ুর মাংসপেশীর দেওয়ালের বৃদ্ধি। এগুলি খুব ছোট বা বড় নানা আকারে হতে পারে। কিছু মহিলাদের ফাইব্রয়েডের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। অনেকের আবার দীর্ঘসময় ধরে অত্যাধিক রক্তপাত এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে স্রাব হয়। ফাইব্রয়েড হলে নিম্ন পেলভিক এলাকায় ব্যথা হতে পারে। এর কারণে যৌনসংযোগের সময় ব্যথা হতে পারে। সব সময় প্রস্রাব পাচ্ছে বলে মনে হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা হতে পারে। যে সব মহিলাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি বা যারা অনেকবার গর্ভধারণ করেছেন তাদের ফাইব্রয়েড হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
পেলভিক প্রদাহজনিত সমস্যা বা পিআইডি একধরনের সংক্রমণ যা মহিলাদের জনন অঙ্গে হয়। এর লক্ষণ হল যোনি থেকে দুর্গন্ধযুক্ত রস ক্ষরণ। এর ফলে অনিয়মিত রজঃস্রাব বা যৌনক্রিয়ার সময় যন্ত্রণাও হতে পারে। যৌনরোগের সংস্পর্শে এল সাধারণত পিআইডি হয়। এর কারণে ফ্যালোপিয়ান টিউবের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে এবং পরবর্তীকালে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম হল এমন কিছু লক্ষণ যা রজঃস্রাবের ৭ থেকে ১৪ দিন আগে হতে পারে এবং কখনও কখনও স্রাব শুরু হওয়ার পরে কয়েক দিন থাকতে পারে। অনেক মহিলাই বিভিন্ন মাত্রায় প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম অনুভব করেন। রজঃস্রাবের সময়ে কিছু মহিলার তীব্র ব্যথা বা আবেগজনিত সমস্যা হতে পারে।
তথ্য সঙ্কলনঃ বাংলা বিকাশপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/30/2020
ঋতুস্রাবে বিভিন্ন অসুস্থতা, নির্ণয় ও চিকিৎসা নিয়ে ...