অরিত্র কলকাতার এক নামকরা স্কুলের প্রথম সারির ছাত্র। চিরকাল সে স্কুলে প্রথম নয় তো দ্বিতীয় হয়েছে। মাধ্যমিকে সে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম কুড়ির মধ্যে স্থান পেল। বাবা-মার কাছে আবদার করে সে বাড়িতে ইন্টারনেট কানেকশন নিল। কিন্তু কিছু দিন পর থেকে অরিত্রর আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্ করতে শুরু করলেন তার বাবা-মা। সে সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে থাকছে। জিজ্ঞাসা করলে বলছে, ইন্টারনেটে পড়াশোনা করছে সে। তার খাওয়াদাওয়া অনিয়মিত হতে থাকল। বাবা-মা কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পর তাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, কোথাও যেতে চায় না। ঘন ঘন মেজাজ হারিয়ে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করল। মুখে মুখে তর্ক করার অভ্যাস হয়ে গেল।
দু’বছর পর যখন উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরলো তখন দেখা গেল সে তার বুদ্ধিবৃত্তি অনুযায়ী যথেষ্ট ভালো ফল করতে পারেনি। জানা গেল সে সব সময় ইন্টানেটে গেম খেলতো। অর্থাৎ ইন্টারনেট আসক্তির দীর্ঘমেয়াদি কুপ্রভাব অরিত্রর অ্যাকাডেমিক কেরিয়েরের উপর প্রতিফলিত হল। এক জন ভালো ছেলের এই অবনতি কেন হল? বিশেষত কমবয়সি ছেলেমেয়েরাই এই আসক্তির কবলে পড়ছে বেশি। কারণ তাদের মধ্যে প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বয়স্ক মানুষদের তুলনায় বেশি।
এখন পর্যন্ত পাওয়া গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে (এশিয়ার কমবয়সি ছেলেমেয়েদের উপর বেশির ভাগ গবেষণা পত্র তৈরি হয়েছে) যখন মানুষ ইন্টারনেট বা ইন্টারনেট গেমে ডুবে থাকে তখন ড্রাগে আসক্ত মানুষ ড্রাগ নিলে মস্তিষ্কের যে অংশ যে পরিমাণ উত্তেজিত হয়, ঠিক সেই অংশ সেই একই পরিমাণে উত্তেজিত হয়। ইন্টারনেট আসক্তি একটা বিশেষ স্নায়বিক সাড়া তৈরি করে, যার প্রভাব অনুভূতির ওপর পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে ইন্টারনেট আসক্ত মানুষের মস্তিষ্কে বিশেষ পরিবর্তন ঘটে।
বিশেষত মস্তিষ্কে ও মস্তিষ্ক কোষের যে অংশগুলির দ্বারা মনোযোগ, অনুভূতি ও প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলোর ওপর এই আসক্তির বিশেষ প্রভাব আছে। এই পরিবর্তন কোকেন বা হেরোইন আসক্ত মানুষের মস্তিষ্কেও দেখা দেয়। ডোপামিন আমাদের মস্তিষ্কে আনন্দ ও পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জাগায়- গবেষণায় দেখা গিয়েছে ইন্টারনেট আসক্ত মানুষের মস্তিষ্কের ডোপামিন গ্রাহকগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/28/2020