বয়স্ক ডায়াবেটিক লোকদের সাধারণ ডায়াবেটিক লোকদের চেয়ে অধিকহারে অকাল প্রয়াণ, শারীরিক অক্ষমতা এবং একই সঙ্গে অন্যান্য শারীরিক অসুখ, যেমন— হৃদরোগ ও রক্তনালির অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ইত্যাদিতে বেশি হারে ভুগতে হয়। বয়স্ক লোকেরা আবার বেশি সংখ্যায় বয়সজনিত রোগেও ভুগেন। বয়সী লোকদের বয়সজনিত গ্লুকোজ সহ্যসীমা হ্রাসপ্রাপ্তি তাদের ক্রমশ ডায়াবেটিসের দিকে ধাবিত করে। তাদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা।
বর্তমানে মানুষের কাঙ্ক্ষিত বয়সসীমা বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত দেশে মোট জনসংখ্যার ১১%-এর বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। আর শিগগিরই তা বেড়ে মোট ডায়াবেটিস রোগীর ২০%-এ উন্নতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক মানুষ মধ্য বয়সেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এ সংখ্যাটি প্রতি দশকেই বেড়ে যেতে থাকে কারো ক্ষেত্রে রক্তে বয়সজনিত অতিরিক্তি গ্লুকোজ থাকতে পারে। আবার অনেককেই বেশি বয়সে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
ফিনল্যান্ডের জনগণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে টাইপ২ ডায়াবেটিসের রোগী পাওয়া গেছে। সে দেশে ৫৬ থেকে ৭৯ বছরের মানুষের প্রায় ৪০% ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মাত্র ৬% বয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অ্যাফ্রো- আমেরিকানদের ১৭.২% জনগণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত (৫৬-৭৯ বছর বয়সী)। বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীরা সাধারণত টাইপ২-এর অন্তর্ভুক্ত। আর এদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার প্রক্রিয়াও অন্যদের মতোই। তাদের ক্ষেত্রেই কম পরিমাণে ইনসুলিন নিঃসরণ একটি বড় কারণ।এ ছাড়া কম শারীরিক শ্রম, দেহে জমাকৃত অতিরিক্ত চর্বি, অন্যান্য অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি ডায়াবেটিস হতে সহায়তা করে।
বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হল— অতিরিক্ত জল পিপাসা পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি। তবে অনির্দিষ্ট ধরনের লক্ষণাদি; যেমন— দুর্বলতা, যৌনাঙ্গে চুলকানি, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি থাকতে পারে। যা রক্তে বেশি মাত্রায় গ্লুকোজের উপস্থিতিই প্রমাণ করে।
তাদের অনেকের আবার কাঁধে ব্যথাও থাকে। বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের অনেককেই ডায়াবেটিসের জটিলতা (যেমন— চোখের ছানিপড়া, কিডনী ফেইলর, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি) নিয়ে প্রথমবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেখা যায়। বয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রেও শারীরিক শ্রম, পরিমিত ও প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ এবং এ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ প্রয়োজন হয়। তবে তাদের জন্য মধ্য বয়সীদের মতো অতটা কঠোরভাবে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ আশা না করাই ভাল। তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য সহযোগী রোগের উপসর্গ দূর করাই প্রধান উদ্দেশ্য। মুখে খাবার এ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধগুলো তাদের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্দেশিত হতে পারে। স্থূলকায়াদের জন্য মেটফরমিন ভাল। তবে যাদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ সহজসাধ্য হয়ে উঠে না। আবার যাদের কিটোনুরিয়া দেখা দিয়েছে তাদের ইনসুলিন নিতে হবে। বয়সী ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, নেফ্রোপ্যাথি, নিউরোপ্যাথি ও পায়ের ঘায়ে অধিক হারে ভুগতে দেখা যায়। এ সব ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
সূত্র: বিকাশপিডিয়া টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/19/2019