ডায়াবেটিসে খাদ্য ব্যবস্থাপনার অর্থ কোনোভাবেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বোঝায় না; কিন্তু ভ্রান্তভাবে অনেকে এমনটাই ভেবে থাকেন। বরং খাদ্য ব্যবস্থাপনা সকল ব্যক্তিকে প্রয়োজনমত স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার নিমিত্তে প্রয়োগ করা হয়। সুষম খাদ্য হলো সেটাই যেখানে খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান (শর্করা, আমিষ, চর্বি, আঁশজাতীয় খাদ্য, ভিটামিন, খনিজ লবণ, জল ইত্যাদি) পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে এবং অনুপাতে থাকে।
শর্করা জাতীয় খাবার গুলোকে মূলত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
আমিষ জাতীয় খাদ্য শরীর গঠন করার পাশাপাশি রক্তকোষ, হরমোন ইত্যাদি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের অবশ্যই পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে প্রাণীজ আমিষ অধিকতর ভাল আমিষ বলে বিবেচিত যা ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ইত্যাদি হতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ আমিষ যা আসে ডাল, বাদাম ইত্যাদি উপাদান হতে, গুণগত বিচারে কিছুটা নিম্নমানের হলেও, একের অধিক ডাল একসাথে রান্নার মাধ্যমে এদের আমিষের গুণগত মানের উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
খাদ্যের সবচেয়ে অধিক ক্যালরি সমৃদ্ধ উপাদান হলো চর্বি। সম্পৃক্ত চর্বি প্রধানত প্রাণীজ খাদ্যোপাদান থেকে আসে আর অন্যদিকে অসম্পৃক্ত চর্বি পাওয়া যায় উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে। সম্পৃক্ত চর্বিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তের চর্বির মাত্রায় মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ধরনের চর্বি জাতীয় খাদ্য এবং এদের উৎস নিম্নরূপ-
নারিকেল তেল, ঘি, মাখন, মার্জারিন, পামতেল, জলপাই তেল, সরিষার তেল, ক্যানোলা তেল, বাদামের তেল, সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, মাছের তেল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ডোনাট, কেক, পেস্ট্রি, বিস্কুট, পিজপ, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
ভিটামিন হলো এক ধরনের জৈব পদার্থ যা খাদ্যে খুব অল্প পরিমাণে থাকে। ভিটামিন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং সুষম খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সব ধরনের ভিটামিন থাকা জরুরী। ভিটামিনগুলোর ভিতর ভিটামিন A, D, E চর্বিতে দ্রবণীয় অবস্থায় থাকে আর B ও C জলতে দ্রবণীয়।
খনিজ লবন শরীরের বিভিন্ন অংগ যেমন হাড়, দাঁত, মাংসপেশী, স্নায়ু কোষ এবং রক্তে থাকে। এরা শরীর সুগঠিত করতে ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে জরুরী। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবন হার্ট ও মস্তিষ্কের কার্যকরী অবস্থা অটুট রাখার জন্য জরুরী। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে ভিন্ন ভিন্ন খনিজ লবন শরীরে সরবরাহ হয় বলে পৃথকভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র ক্যালসিয়াম নামক খনিজ পদার্থটি বৃদ্ধ বয়সে, গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকারী অবস্থায় আলাদা ভাবে দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
খাদ্যে আঁশের প্রধান উৎস হলো- গম, ফল, সবজি, আলু। আঁশ জাতীয় খাবারের উপকারিতা হলো-
ডায়াবেটিস ব্যক্তির খাদ্যব্যবস্থা কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। যেমন : বয়স, লিঙ্গ, ডায়াবেটিসের ধরন, ওজন, শারীরিক পরিশ্রমের ধরন, অন্যকোনো শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে কিনা, গর্ভাবস্থা, স্তন্যদানকারী অবস্থা ইত্যাদি।
খাদ্য থেকে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় তার একককে ক্যালরি বলা হয়। যেমন শর্করা ও আমিষ জাতীয় খাদ্যের প্রতি গ্রাম থেকে ৪ কিলোক্যালরি এবং চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রতি গ্রাম থেকে ৯ কিলোক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়।
প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরি একজন ডায়াবেটিস ব্যক্তি গ্রহণ করবে ৩টা মূল খাবার (সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার) এবং ২-৩টা টিফিন (মধ্যসকাল, বিকাল, শোবার আগে) হিসেবে।
সেক্ষেত্রে
একজন ডায়াবেটিস রোগীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা থাকা জরুরী। খেয়াল রাখতে হবে যে একই বিষয় কখনই সবার জন্য সমান ভাবে প্রয়োজনীয় নয়। তাই খাদ্য ব্যবস্থা নির্ধারণের আগে সে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন সেগুলো হলো-
(ক) সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা
(খ) খাদ্য পিরামিডের ধারণা
(গ) স্বাস্থ্যকর খাদ্য বাছাই- সিগন্যাল পদ্ধতি
(ঘ) থালা মডেল
(ঙ) তরসনধনবি Hand Jive
(চ) খাদ্য পরিবর্তন ব্যবস্থা
(ছ) শর্করা গণনা
(জ) গ্লাইসেমিক সূচক পদ্ধতি ইত্যাদি
ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাসের মূলনীতিগুলো মেনে চলা উচিত। যেমন
সূত্র: বিকাশপিডিয়া টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019