এ কথা জানা আছে যে আমাদের দেশে সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠা লাভ সম্ভব হয়। উক্ত সংশোধনী আইনের এগারো তফশিলে ২৯টি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কথা বলা আছে, যা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে রূপায়িত করতে হবে। উক্ত তফশিলের ১১-তম ও ২৩-তম বিষয়গুলি হল যথাক্রমে পানীয় জল ও নির্মলীকরণ সংক্রান্ত। আগেই বলা হয়েছে যে, দু’টি বিষয়ই জনস্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, একটি যেন অন্যের পরিপূরক। নির্মলীকরণের সুবিধাগুলি তখনই অর্জন করা সম্ভব যখন মানুষজনকে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা যাবে। পানীয় জলের সরবরাহ এবং উপযুক্ত নির্মলীকরণের সুব্যবস্থা কী ভাবে এক সামাজিক তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচনা করতে পারে, এ বিষয়ে একটি ঘটনার কথা তুলে ধরা যেতে পারে। স্থান হল অধুনা তেলঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল জেলার গঙ্গাদেবীপল্লী গ্রাম। সেটা ছিল গত শতাব্দীর নয়ের দশক। পাত্র-পাত্রী হচ্ছেন ওই গ্রামের সাধারণ মানুষজন। ওই সময়ে গঙ্গাদেবীপল্লি ছিল খুবই ছোট একটি গ্রাম। সেখানে কমবেশি ৩০০টি পরিবার বাস করত। গ্রামটি সর্বার্থেই অনুন্নত। সেখানে না ছিল কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা, না ছিল উন্নত নির্মলীকরণের ব্যবস্থা। প্রকৃতির ডাকে মানুষজন মাঠঘাট ব্যবহার করত। গ্রামের শিশুদের লেখাপড়ার কোনও পাট ছিল না। শিশুশ্রমিক হিসাবে অনেকেই হয় তুলো চাষর কাজে নয়তো বস্ত্রমিলে যুক্ত হত। সব চাইতে খারাপ অবস্থা ছিল গ্রামের মহিলাদের। যে হেতু গ্রামে কোনও পানীয় জলের উৎস ছিল না, গ্রামবাসীদের প্রায় এক কিলোমিটার দূরের এক উৎস থেকে (ইঁদারা) পানীয় জল সংগ্রহ করতে হত। গ্রামের মহিলারা রাত প্রায় তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠে ওই ইঁদারা থেকে জল আনতে যেতেন। যে যত আগে যেতে পারতেন তার জল পাওয়াটা তত নিশ্চিত হত। নতুবা শেষের দিকের পরিষ্কার জলের পরিবর্তে ঘোলা জল পাওয়া যেত, যা পানের অযোগ্য।
দিনের পর দিন এই অসহনীয় অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে গ্রামের মানুষজন বুঝতে পারলেন কিছু একটা করা প্রয়োজন। নতুবা শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাশার অন্ধকারে ডুবে থাকবে। প্রথমেই অনুভূত হল যে, অবিলম্বে পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। ওই ব্যাপারে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অনুঘটকের ভূমিকা পালনে রাজি হল। গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের মোট খরচের ১৫ শতাংশ গ্রামবাসীরা সমবেত ভাবে সংগ্রহ করলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প অনুযায়ী বাকি ৮৫ শতাংশ সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে — এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে স্বেচ্ছাসেবক বেছে নিয়ে গঠিত হল এক জল কমিটি। উৎসাহিত গ্রামবাসীরা মাত্র দু-মাসের মধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা জড়ো করলেন, বাকিটা ইতিহাস।
সুত্রঃ যোজনা জানুয়ারী ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020