কয়েক মাসের মধ্যেই প্রথম জলাধারটি তৈরি হল। প্রতিটি বাড়িতে জল সংযোগের ব্যবস্থা করা হল। সুষ্ঠু জল ব্যবহারের জন্য কমিটি একটি নির্দেশিকা তৈরি করল যা প্রতিটি পরিবার মানতে বাধ্য থাকবে। যেমন—আধ ইঞ্চি ব্যাসের জলের পাইপ জল সংযোগের জন্য ব্যবহার করা যাবে, জলের কল মাটি থেকে চার ফুট উপরে থাকবে, ব্যবহার করা জল জমা করে তা দিয়ে বাড়ির সামনে ছোটখাটো সবজি খেতে জলসেচন করা যাবে ইত্যাদি। জল কমিটির সুপারিশ হল যে, কেউ যদি উক্ত নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সেই পরিবারের জলের সংযোগ বন্ধ হয়ে যাবে এবং একমাত্র ১০০ টাকা জরিমানা ও প্রয়োজনীয় মুচলেকা দিয়ে পুনরায় সংযোগ নেওয়া যাবে। জল উত্তোলনের যন্ত্রপাতি ভবিষ্যতে মেরামতির জন্য ছোটখাটো যন্ত্রাংশ কমিটি নিজের কাছে মজুত রেখে দিল।
পরবর্তীতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন গঙ্গদেবীপল্লীকে মডেল হিসাবে তুলে ধরার জন্য এগিয়ে এসেছে। জলে ফ্লুরাইড বা অন্যান্য দূষিত ক্ষতিকারক পদার্থ দূরীকরণের জন্য টাটা সংস্থা বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দান করেছে। এর ফলে পানীয় জলের গুণমান বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে বিশুদ্ধ জলের জোগান অব্যাহত রাখতে গ্রামবাসীদের প্রতি ২০ লিটার পিছু এক টাকা মূল্য দিতে হয়।
জল সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি গ্রামটি নির্মলীকরণের বিষয়েও যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।২০০০ সালে স্থানীয় পঞ্চায়েত তথা গ্রামসভা নির্মলীকরণের বিশেষ প্রকল্প ‘নিজস্ব পাকা পায়খানা’ (আইএসএল) গঙ্গাদেবীপল্লিতে রূপায়ণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ওই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচিত করে একটি কমিটি গঠন করা হল। এই বন্দোবস্ত হল যে কমিটির কাছে নির্মাণের জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট ও আনুষঙ্গিক অনাময় সামগ্রী আসবে এবং কমিটির তত্ত্বাবধানে গ্রামের প্রতিটি ঘরে পায়খানা তৈরি হবে।
ঠিক তিন মাসের মধ্যে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে স্বাস্থ্যকর পাকা পায়খানা তৈরির কাজ শেষ হল। কিন্তু দেখা গেল যে পুরনো অভ্যাস ত্যাগ না করে প্রায় সবাই আগের মতো মাঠে যাচ্ছেন। পায়খানাগুলি স্টোররুম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রচার অভিযান কোনও কাজেই এল না। অবশেষে আসরে অবতীর্ণ হল গ্রামসভা। তারা বলল মাঠে যাওয়ার কুঅভ্যাস ত্যাগ না করলে ৫০০ টাকা জরিমানা হবে। তিন বছর লেগেছিল গ্রামবাসীদের এই কুঅভ্যাস বদলাতে।
সুত্রঃ যোজনা জানুয়ারী ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/7/2020