ডায়েরিয়া, ডিসেন্ট্রি, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগের জীবাণু অন্ত্রে বাসা বাঁধার ফলে পুষ্টি উপাদানের শোষণ বাধা প্রাপ্ত হয়। এর ফলে খাদ্যের অনুপুষ্টি উপাদানগুলি ঠিক ভাবে শোষিত না হওয়ার জন্য যে সমস্যা আমাদের রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে তা হল রক্তাল্পতা। ৩ বছরের কমবয়সি শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশই রক্তাল্পতার শিকার, যা শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
অপুষ্টি সংক্রান্ত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র খাদ্যের অভাব নয়, ভারতীয় শিশুদের কম উচ্চতার মতো অপুষ্টিজনিত সমস্যা তৈরি হচ্ছে, মলমূত্রে থাকা জীবাণু দ্বারা জল ও পরিবেশ দূষণের কারণে। সঠিক স্যানিটেশন বিধি পালন না করার জন্য আরও একটি গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। প্রতি বছর ডায়েরিয়ার কারণে প্রায় ২১২০০০টি পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশু মারা যায়। বারবার ডায়েরিয়া যেমন শিশুর শরীরে জলশূন্যতা তৈরি করে, তেমনই নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাবও তৈরি হয়। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পঞ্চাশ শতাংশ অপুষ্টি হয় ঘনঘন ডায়েরিয়া, অন্ত্রে কৃমি বা অন্যান্য এফটিআই সংক্রমণের জন্য এবং এর জন্য দায়ী হল দূষিত জল, যথাযথ স্যানিটেশনের অভাব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ডিন স্পিয়ার্স তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ভারতে খোলা জায়গায় মলত্যাগ এবং তদজনিত দূষণ শিশুদের ‘কম ওজন’ ও ‘কম উচ্চতার’ জন্য বহুলাংশে দায়ী। স্পিয়ার্স আরও বলেছেন যে, ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করেন না, সেই সব এলাকায় সংক্রমণজনিত শিশু মৃত্যুর হার বা শিশুদের ‘কম উচ্চতা সম্পন্ন’ হওয়ার হার যথেষ্ট বেশি। প্রকৃত পক্ষে শিশুর উচ্চতার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে তার বংশগতি, জিনগত কার্যক্ষমতা, শৈশবের স্বাস্থ্য ও অপুষ্টির মানের উপর, যা তাকে বংশগতি অনুসারে স্বাভাবিক উচ্চতায় পৌঁছতে সাহায্য করে। উন্নত দেশগুলির ক্ষেত্রে শিশুর সঠিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, যথাযথ পুষ্টি ও সুস্থ পরিবেশের কারণে শিশু তার বংশগতির ধারা অনুযায়ী, বয়স অনুযায়ী সঠিক উচ্চতা পায়।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/14/2019