স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে কি এ রাজ্যে সচেতনতা বাড়ছে? সম্প্রতি সর্বভারতীয় বণিকসভা অ্যাসোচেম যে সমীক্ষা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে,স্বাস্থ্যবিমায় প্রিমিয়াম আদায়ে এ দেশে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অঙ্কের নিরিখে এ রাজ্যের স্থান চতুর্থ। ২০০৯-১০-এর তুলনায় ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার হার বেড়েছে ১৪৪ শতাংশেরও বেশি।
অ্যাসোচেমের হিসাব বলছে, ২০১১-১২অর্থবর্ষে এ দেশে স্বাস্থ্যবিমার ব্যবসা হত ১৩ হাজার কোটি টাকার। ২০১৬-১৭-র অর্থবর্ষে তা ৩২ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে মনে করছে ওই বণিকসভা। দেখা গিয়েছে ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে দেশে সার্বিক ভাবে প্রিমিয়াম আদায় বৃদ্ধির হার ৮৮ শতাংশ। তাদের বক্তব্য, যে হারে বাড়ছে চিকিৎসা খরচ, তাতে এক শ্রেণির মানুষ বাধ্য হচ্ছেন স্বাস্থ্যবিমার শরণাপন্ন হতে। এরই সঙ্গে বেড়েছে মাথাপিছু আয়, জটিল রোগের প্রকোপ এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি। বিমার প্রিমিয়ামের অঙ্কবৃদ্ধিতে এই কারণগুলিও অনস্বীকার্য, বলছে বণিকসভাটি।
সমীক্ষাটির পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, প্রিমিয়ামের অঙ্কে সবচেয়ে এগিয়ে মহারাষ্ট্র। সেখানে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম আদায়ের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। তাদের প্রিমিয়ামের পরিমাণ ১ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আদায় করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কর্ণাটক। চতুর্থ স্থানটি পেয়েছ পশ্চিমবঙ্গ। ওই অর্থবর্ষে এ রাজ্য থেকে প্রিমিয়াম আদায় হয়েছে ৯৯৩ কোটি টাকা। প্রথম তিনটি রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে প্রিমিয়ামের অঙ্ক অনেকরটাই কম হলেও এ রাজ্যের সাফল্য অন্য জায়গায়। তিন বছর আগে এ রাজ্য স্বাস্থ্যবিমায় প্রিমিয়াম আদায়ের অঙ্ক ছিল মাত্র ৪০৬ কোটি টাকা। ফলে বৃদ্ধির হারে তা ১৪৪ শতাংশ, যা মোটেই হেলাফেলার নয় বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
তবে সবাস্থ্যবিমায় সবাইকে চমকে দিয়েছে বিহার। সেই রাজ্যে যেখানে ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে প্রিমিয়াম আদায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র সাড়ে সাত কোটি টাকা, সেখানে তা তিন বছর পরে দাঁড়ায় ৩১৫ কোটি টাকারও বেশি। বৃদ্ধির হারে তা ৪ হাজার ৮৬ শতাংশ বেশি। বৃদ্ধির হারে বিহারের সঙ্গে কিছুটা পাল্লা দিয়েছে ওড়িশা ও ছত্তিশগড়। তাদের প্রিমিয়াম আদায় বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৬২৫ এবং ৭০৮ শতাংশ। যেখানে গোটা দক্ষিণ ভারতই প্রায় প্রিমিয়াম আদায়ের অঙ্কে এগিয়ে রয়েছে, সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রমী ভূমিকা নিয়েছে দক্ষিণের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ। বৃদ্ধি তো দূরঅস্ত, ২০০৯-১০ সালে যেখানে তাদের প্রিমিয়াম আদায় হয়েছিল ৮০১ কোটি টাকা, তা তিন বছরের মাথায় নেমে আসে ৬৯৫ কোটিতে। ১৩ শতাংশের মতো প্রিমিয়াম বাবদ ব্যবসা হারায় ওই রাজ্য।
এই তথ্যগুলির পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে অ্যাসোচেম। তাদের কথায়, যত মানুষ স্বাস্থ্যবিমার আওতায় এসেছেন, তার ৬৫ শতাংশ দখলে রেখেছে বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলি দখল করে রয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ বাজার। এই বণিকসভাটি ইতিমধ্যেই বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইনসিওরেন্স রেগুলারিটি ডেভলপমেন্টকে আরজি জানিয়ে বলেছে, এমন কিছু নীতি প্রনয়ণ করুক, যেখানে শুধু উচ্চবিত্তদের জন্য নয়, প্রকল্প আসুক নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জন্যও।
সূত্র : বর্তমান, ৩ নভেম্বর ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/14/2020