জনস্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিতে প্রতিটি সংসদে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রায় দু’মাস আগে। কিন্তু, উদাসীনতার কারণে কমিটিই গড়ে তোলা যায়নি বলে অভিযোগ!
পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩৮৪৬টি সংসদের মধ্যে মাত্র ২২৭টিতে কমিটি গঠন সম্ভব হয়েছে। অগ্রগতি শ্লথ দেখে বুধবার এ ব্যাপারে এক বৈঠক হয়। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়, দ্রুত কমিটি গঠনের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কী কী কাজ করতে বাকি রয়েছে, দ্রুত তার তালিকা তৈরি করে পাঠাতে হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “যাতে সমন্বয়ের অভাব না থাকে, প্রতিটি স্তরে নিয়মিত সকলের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করা হয়, সে সব নিয়েই আলোচনা হয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই কমিটি গড়ে কাজ শুরু হয়ে যাবে।” জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রধান সমস্যা হল সমন্বয়। একাধিক দফতর এ বিষয়ে কাজ করে। স্বাস্থ্য দফতর যেমন কাজ করে, তেমনি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরও কাজ করে, আইসিডিএস বিভাগ যেমন কাজ করে তেমনি পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদও করে। কিন্তু কে কোন কাজটা করছে, কোন কাজ কোথায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করা উচিত তার কোনও রূপরেখা থাকে না। ফলে যে গ্রামের মানুষ এখনও কুয়ো থেকে জল তুলে খান সেখানে নলকূপ না বসিয়ে যেখানে নলকূপ রয়েছে সেখানে পাইপ লাইনে জল দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হয়!
এই ধরনের গোলমাল রুখতেই প্রতিটি সংসদে কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যা অনেকটা রোগী কল্যাণ সমিতির ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যেতে পারে। যে কমিটিতে ৬-৭ জন সদস্য থাকবেন। পঞ্চায়েত প্রধান হবেন চেয়ারম্যান। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, মহিলা পঞ্চায়েত সদস্য, আশা কর্মী, স্ব-সহায়ক দলের সদস্যদেরই কমিটিতে রাখা হবে। তাঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। তাঁদের কী কী কাজ করতে হবে? এই কমিটির একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও থাকবে। হঠাৎ নলকূপ সামান্য খারাপ হয়ে গেল, কোথাও নলকূপে নোংরা জল আসছে, কম খরচের এই কাজগুলি নিজেরাই করে দেবেন। কিন্তু বড় ধরনের কাজ হলে তা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিডিওকে জানাবেন। বিডিও সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেবেন। তারপরই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করা হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব গ্রামে এখনও নলবাহিত জলের ব্যবস্থা নেই তার তালিকা তৈরি করতে হবে। জনস্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত জেলায় ১১৭টি গ্রামে নলবাহিত জল সরবরাহ করা হয়। চলতি আর্থিক বছরে আরও ৫২টি গ্রামে নলবাহিত জল সরবরাহের জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে। আগামি আর্থিক বছরে আরও ৬০টি গ্রামের জন্য প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে।
কমিটি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। এই জন্যই এ দিনের বৈঠকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়েন্ট বিডিও ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককেও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। প্রতিটি মাসের চতুর্থ শনিবার স্বাস্থ্য নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে এ বার প্রতিটি সদস্যের উপস্থিতির উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। সদস্যরা উপস্থিত না হলে তা জেলা প্রশাসনকে অবশ্যই তা জানাতেও বলা হয়েছে।
সূত্র : নিজস্ব সংবাদদাতা, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/4/2020