রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুকুটে নয়া পালক! আরও এক বার দেশকে পথ দেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।
স্বাস্থ্য দফতরের জোড়া চ্যালেঞ্জ ছিল প্রত্যন্ত জেলায় যুগপৎ উন্নত চিকিত্সা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরির। জোড়া চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সমস্ত জেলা হাসপাতালে ডাক্তারির স্নাতকোত্তর পাঠক্রম ডিএনবি (ডিপ্লোমেট অব ন্যাশনাল বোর্ড) চালুর সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্যের ৬টি জেলা হাসপাতালে প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়ে পঠনপাঠনও চলছে জোরকদমে। এ বার সেই মডেলের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করার এই সহজ দাওয়াই সারা দেশে প্রত্যেক জেলায় রূপায়িত করতে চলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পাঠক্রমের নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল বোর্ড একজামিনেশনের অধিকর্তা বিপিন বাত্রা শুক্রবার কলকাতায় এক কর্মশালায় এ কথা জানান। বছর খানেক আগেই গরিব রোগীদের স্বল্পমূল্যে জীবনদায়ী ওষুধ সরবরাহের জন্য রাজ্যে চালু হয় ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান। সেই মডেলও সারা দেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও সেই মডেল সমস্ত রাজ্যকে অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। এ বার স্বাস্থ্য দফতরের উদ্ভাবিত আরও এক মডেল অনুসরণ করতে চলেছে গোটা দেশ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের আকাল মেটাতে রাজ্য জুড়ে সমস্ত জেলা হাসপাতালে বিভিন্ন বিষয়ে ডিএনবি কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শদাতা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান সুব্রত মৈত্রের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ভাবনা। পাঠক্রম চালুর জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল বোর্ড একজামিনেশন প্রাথমিক ভাবে ৬টি জেলা হাসপাতালে অনুমতি দেয়। শুক্রবার কলকাতায় ডিএনবি কোর্সে শিক্ষকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত হয়েছিলেন বিপিন বাত্রা। কর্মশালার ফাঁকে রাজ্যের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় গ্রামাঞ্চলে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া এবং বিশেষজ্ঞ তৈরির এই মডেল যথেষ্ট সফল বলে নিজের মত জানান বাত্রা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই মডেল সারা দেশের সমস্ত জেলাতেই রূপায়িত করতে অগ্রসর হচ্ছে বলে শুক্রবারের কর্মশালায় তিনি ঘোষণাও করেন।
এই পাঠক্রমে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা হল এমবিবিএস। ডিএনবি পাঠক্রমে পড়াকালীন পড়ুয়ারা চিকিত্সক হিসেবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগী পরিষেবাও দিতে পারবেন। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের শেখানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদেরও বদলি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জেলা হাসপাতালে। এতে গ্রামের রোগীদের জোড়া সুবিধে। যে সমস্ত বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের জন্য জেলা থেকে কলকাতায় ভিড় করতেন রোগীরা, সেই বিশেষজ্ঞদের এখন জেলাতেই পাচ্ছেন তাঁরা। এই মডেল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ডিএনবি কোর্স চালু হয়েছে পুরুলিয়া, কৃষ্ণনগর, বারাসত, চুঁচুড়া, হাওড়া এবং আসানাসোল জেলা হাসপাতালে। সেখানে স্ত্রীরোগ, সার্জারি, মেডিসিন, অ্যানাস্থেসিয়া এবং পেডিয়াট্রিক্স বিষয়ে কোর্স পড়ানো হচ্ছে। এ বার সিদ্ধান্ত হয়েছে আরও চারটি জেলা হাসপাতালে এই কোর্স চালু হবে। সেগুলি হল তমলুক, সিউড়ি, জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি। এই পাঠক্রমে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা হল এমবিবিএস। ডিএনবি পাঠ্যক্রমে পড়াকালীন পড়ুয়ারা চিকিত্সক হিসেবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগী পরিষেবাও দিতে পারবেন।
সূত্র : এই সময়, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/3/2020