বিকাশপিডিয়ার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রটিকে কী ভাবে আরও জনপ্রিয় করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করতে কলকাতার প্রথম সারির চিকিৎসকরা সম্প্রতি এক সভায় মিলিত হন। আলোচনার সূত্রপাত করে বিকাশপিডিয়ার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ডাঃ সুকুমার মুখার্জি প্রশ্ন তোলেন বিকাশপিডিয়া কি শুধুমাত্র তথ্য দিয়ে যাবে নাকি তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যম হয়ে উঠবে।
ডাঃ অশোকানন্দ কোনার (গ্যাস্ট্রোএনট্রোলজিস্ট) বলেন, বিকাশপিডিয়াকে মাধ্যম করে স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। তবে ব্যস্ততার কারণে এ কাজে চিকিৎসকরা হয়তো সব সময় নিজেরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এই কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করবেন। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডাঃ সুব্রত মৈত্র বলেন, রাজ্যে ন্যায্যমূল্যে ওষুধের দোকান, ডায়ালিসিস থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। অনেকে সে সম্পর্কে জানেনই না। বিকাশপিডিয়ার মাধ্যমে রাজ্যের চিকিৎসাক্ষেত্রে কোথায় কী সুবিধা রয়েছে তা জানাতে হবে।
ডাঃ দীপক ঘোষ (সার্জারি) বলেন, প্যারা মেডিক্যাল পার্সনদের এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে নিলে কর্মদ্যোগটি অনেক বাস্তবসম্মত হবে।
ডাঃ জয়দেব রায় (পেডিয়াট্রিক) প্রস্তাব দেন, পোর্টালটিকে আরও আকর্ষক করে তুলতে প্রচুর ছবি ও চার্টের ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি অ্যানিমেশন, ছোট ছোট ভিডিও ছবি রাখারও তিনি প্রস্তাব দেন। অন্য প্রকল্পগুলির মতো বিকাশপিডিয়া নিয়েও সরকারকে প্রচার করতে হবে বলে মত তাঁর।
একই সুরে ডাঃ সিদ্ধার্থ ঘোষ (অপথালমোলজি) বলেন, বিকাশপিডিয়ায় মোবাইল অ্যাপের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পাশাপাশি ডিভিও কনফারেন্স এবং ভিডিও ক্লিপিংসও রাখতে হবে। তথ্যকে চার্টের আকারে দিলে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয় বলে মত তাঁর। বিকাশপিডিয়াকে আরও ব্যবহারিক করতে ডাঃ বাসুদেব মুখোপাধ্যায় সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হিসেবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সঙ্গে একটি নেটওয়ার্ক তৈরিতে জোর দেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির তথ্য থাকবে বিকাশপিডিয়ার কাছে। যাতে কোনও ব্যক্তি তার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অন্য দিকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা যাতে বিকাশপিডিয়ার সাহায্য নিতে পারে তার ব্যবস্থাও করতে হবে। এ কাজের জন্য একটি কেন্দ্রীয় অফিস খুলতে হবে। যেখানে একটি নির্দিষ্ট দিনে বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পরামর্শ নিয়ে বিকাশপিডিয়ার কেন্দ্রীয় অফিস থেকে তা সরবরাহ করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থা করা হলে তিনি নিজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
ডাঃ দেবাশিস বসু (প্রিভেনটিভ মেডিসিন) বলেন, বিকাশপিডিয়াকে আরও ব্যবহারিক করতে প্রাথমিক ভাবে তিনটে জেলাকে ধরে এগোতে হবে। এই জেলাগুলির ডিএম এবং সিএমওএইচ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে বিকাশপিডিয়াকে সমৃদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তারাও যাতে বিকাশপিডিয়ার প্রচারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন তা নিয়েও কথা বলতে হবে।
ডাঃ শুভাশিস মৈত্র বলেন, একটি নির্দিষ্ট এলাকা ধরে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে কাজ শুরু করতে হবে। বিকাশপিডিয়ার সহায়তায় স্বাস্থ্য সচেতনতার কাজ স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে হবে না। সর্বক্ষণের কর্মী দিয়ে এ কাজ করতে হবে। এর জন্য ওই এলাকা থেকে প্রতিনিধি তুলে আনতে হবে।
পম্পিতা চক্রবর্তী (মাইক্রবায়োলজিস্ট) বলেন, যুবক-যুবতীদের মধ্যে বিকাশপিডিয়ার প্রচার বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আর্কষণীয় বিজ্ঞাপন দিতে হবে বলে মত তাঁর। বৈঠকে উপস্থিত প্রাক্তন উপাচার্য মণিমালা বসুর মতে বিকাশপিডিয়া হল, ‘নলেজ ইন ই-মিডিয়া’। বিকাশপিডিয়ার প্রসারে সমস্ত ভাবনাচিন্তা এটা মাথায় রেখেই করতে হবে। পাশাপাশি তাঁর প্রস্তাব, পোর্টালের সব ক’টি বিভাগ নিয়েই যদি ওয়ার্কশপ করা যায় তবে তা প্রচারের পক্ষে অনেক কার্যকর হবে।
বৈঠকে প্রাক্তন উপাচার্য তথা বিকাশপিডিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা অশোক ঠাকুর বলেন, পোর্টালটির পরিচিতি বাড়াতে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এর প্রচার করতে হবে। পরিশেষে প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিকাশপিডিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, বিকাশপিডিয়া প্রসারে মিডিয়া সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি একে আরও ব্যবহারিক করে তুলতে আমজনতার প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কারও ছোটখাটো অসুখ করলে কোথায় যেতে হবে তার তথ্যও দিতে হবে বিকাশপিডিয়াকে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/15/2020