নিজে তো খাই না। কিন্ত্ত তাতেও একেবারে যে ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে চিন্তামুক্ত, বলা যাচ্ছে না। সারা জীবনে কোনও দিনও যাঁরা ধূমপান করেননি, সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে, প্যাসিভ স্মোকিং-এর আওতায় পড়ে তাঁদের ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়াকে পৃথক রোগ ধরলে সে কারণে মৃত্যুর সংখ্যার বিচারে সেটি হবে বিশ্বের সপ্তম প্রাণঘাতী রোগ। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত ওই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, সারা বিশ্বে ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃতদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ মানুষ মৃত্যুর আগে অবধি গড়ে ৬৪ বছরের জীবনে ১০০টিও সিগারেট খাননি। ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃত মহিলাদের অর্ধেকই কোনও দিন ধূমপানই করেননি।
কিন্তু ধূমপায়ী না হয়েও এই বিপদ কেন? গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা কোনও দিন ধূমপান করেননি, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে তাঁদের শরীরেও এক বিশেষ ধরনের জেনেটিক পরিবর্তন (ড্রাইভার মিউটেশন) ফুসফুসের কোষ এবং টিউমারগুলিকে ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসারক্রান্ত হওয়ার দিকে এগিয়ে দেয়। তবে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ফুসফুসের ক্যানসারের ড্রাইভার মিউটেশন এবং ধূমপান না-করার বিষয়টি একেবারে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত নয় বলেই দাবি গবেষকদের। যেমন, এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপটরে (ইজিএফআর) ড্রাইভার মিউটেশন নন-স্মোকারদের ক্ষেত্রে প্রায় ১০০% ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আবার তেমনই ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রেও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে এই মিউটেশন থাকে।
প্রাথমিক গবেষণায় যে ইঙ্গিতই মিলুক না কেন, নন-স্মোকার এবং প্যাসিভ স্মোকারদের ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে মূল কারণ এবং সরাসরি/পরোক্ষ ধূমপানের মতো রিস্ক ফ্যাক্টরের সঙ্গে ফুসফুসের টিউমারে নানা প্রকার ড্রাইভার মিউটেশন সৃষ্টি হয়ে ম্যালিগন্যান্সি তৈরির কারণ কিন্তু এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অধরাই রয়ে গিয়েছে -- সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করেছেন ফুসফুসের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সেবাস্তিয়ান করোদ। তাঁর গবেষণাপত্রে তিনি ৩৮৪ জন নন-স্মোকারের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়েছেন, কী ভাবে প্রত্যক্ষ ধূমপানে আসক্ত ফুসফুসের ক্যানসার রোগীর ইজিএফআর ড্রাইভার মিউটেশন-এর সঙ্গে নন-স্মোকারদের ফুসফুসে ইজিএফআর ড্রাইভার মিউটেশনের মিল রয়েছে। ফলে নিজে ধূমপায়ী না-হলেই যে আপনি ফুসফুসের ক্যানসার থেকে নিরাপদ, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। ‘এই সময়’-কে পাঠানো তাঁর ই-মেলে নিউ ইয়র্কের ফুসফুস ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চার্লস রুডিনের বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্যটাও করোদের দাবিকেই সমর্থন করছে।
তবে এর সঙ্গেই রয়েছে জিনগত সংযোগের বিষয়টিও। নন-স্মোকার এবং প্যাসিভ স্মোকারদের জিনগত গঠনের উপর তুলনায় কম গবেষণা হওয়ায়, আসলে রোগটি জিন না প্যাসিভ স্মোকিং---কোন পথে ঢুকছে, তা সঠিক ভাবে নির্ণয় করার কোনও সহজসাধ্য এবং হাতেগরম রেসিপি গবেষক-চিকিত্সকদের কাছে নেই বলে দাবি করেছেন করোদ এবং রুডিন, দু’জনেই।
ফলে সাধু সাবধান!
সূত্র : সুদীপ্ত তরফদার, এই সময়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/25/2020