সরকারে আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলির উপরে রোগীর চাপ কমানোর কথা বলেছিলেন। সেই পথে হেঁটেই উত্তর শহরতলিতে আরও একটি পুর-হাসপাতাল শুরু হতে চলেছে। উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ পুরসভার উদ্যোগে আইসিসিইউ, আইটিইউ, ভেন্টিলেটর-সহ বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন এই হাসপাতাল কয়েক দিনের মধ্যেই খুলতে চলেছে।
খড়দহ পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, এই পুর এলাকাতেই রয়েছে বলরাম সেবামন্দির স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। একটু দূরে সাগর দত্ত স্টেট জেনারেল। তা সত্ত্বেও আরও একটি হাসপাতালের অনুমোদন দিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কিছুটা দ্বিধা ছিল। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দু’টি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে প্রায় বঞ্চিত স্থানীয়েরা। সামান্য শারীরিক জটিলতা দেখলেই ওই দুই হাসপাতাল রোগী রেফার করে আরজিকর-এ। ফলে যাবতীয় বাধা কাটিয়ে প্রায় প্রস্তুত ‘সুরেন্দ্রকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় পৌর সেবা সদন’ থেকে যথাযথ পরিষেবা প্রাপ্তির আশায় রয়েছেন বাসিন্দারা।
এই সেবা সদনে থাকছে ইমার্জেন্সি বিভাগ, আট শয্যার আইসিসিইউ এবং আইটিইউ। ১৪টি সাধারণ শয্যা। একটি করে ভেন্টিলেটর ও বাই প্যাপ যন্ত্রের পাশাপাশি থাকছে দশটি মনিটর, বেসিক ল্যাপারোস্কোপিক ইউনিট, পেসমেকার বসানোর জন্য সি-আর্ম। পুরসভা সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে খড়দহ পুরসভা প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করেছে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ও ইকো কার্ডিওগ্রাফি করার জন্য ডপলার যন্ত্র কেনার পদ্ধতি শুরু হয়েছে। হাসপাতালের রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে এখান থেকেই। বহির্বিভাগ এখনই শুরু হবে না। পুরসভার পুরপ্রধান তাপস পাল বলেন, “বিপিএল তালিকাভুক্তদের চিকিৎসা খরচে ছাড়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভবিষ্যতে প্রবীণদের জন্যও ছাড়ের কথাও ভাবা হবে।”
খড়দহ পুরসভা এর জন্য একটি পরিচালন কমিটি গঠন করেছে। তার চেয়ারম্যান চিকিৎসক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় পঁচিশ শতাংশ কম খরচ পড়বে এখানে। মূলত হৃদরোগের চিকিৎসাই হবে। প্রসব বাদে যে কোনও স্ত্রী-রোগের চিকিৎসা, গল্ড ব্লাডার, অ্যাপেনডিক্স-সহ পেটের যাবতীয় অস্ত্রোপচার, পেসমেকার বসানো হবে। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে এখনই বাইপাস সার্জারি হবে না। হাড় সংক্রান্ত কোনও অস্ত্রোপচারও হবে না।”
বাসিন্দাদের আশঙ্কা, চিকিৎসক, নার্স নিয়োগে ভবিষ্যতে সমস্যা হলে হাসপাতাল তার প্রাসঙ্গিকতাই হারাবে। এই প্রসঙ্গে পুরসভার চেয়ারম্যান-পারিষদ কাঞ্চনকুমার ঘোষ বলেন, “খড়দহের চিকিৎসকদের বড় অংশ স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স নিয়োগ করা হবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাজ থমকে থাকতে পারে না। চেষ্টা হচ্ছে মানুষের কাছে উন্নত মানের পরিষেবা পৌঁছে দিতে। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে একটি অত্যাধুনিক মানের অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হচ্ছে সেবা সদনকে।”
সূত্র : জয়তী রাহা, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৭ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020