অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

থ্যালাসেমিয়ারোধী চিকিত্সায় নতুন দিশা দুই বাঙালির

থ্যালাসেমিয়ারোধী চিকিত্সায় নতুন দিশা দুই বাঙালির

শৈশব থেকেই একই ধরনের থ্যালাসেমিয়ার চিকিত্সা চলছিল ট্যাংরার রুমা আর ঝুমার। ওষুধ আর মাসে দু’ বার রক্ত নিয়ে ভালোই ছিল দুই যমজ বোন। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যমজকে দেখতে দেখতে চিকিত্সার মাঝপথেই এক দিন অবাক হয়ে গেলেন ডাক্তারবাবু। দেখলেন, ঝুমা ঋতুমতী হয়েছে। কিন্তু থ্যালাসেমিয়ার থাবায় আটকে গিয়ে রুমা যেন এখনও ক্লাস সেভেনের বালিকা! অথচ যমজের একই ওষুধ চলছিল। বয়স এক, তাই ডোজও অভিন্ন। চিকিত্সক পরে বুঝেছিলেন, রক্ত নিতে নিতে দু’জনের শরীরে বিস্তর লোহা জমে গেলেও, বিভিন্ন অঙ্গে জমে যাওয়া সেই লোহার পরিমাণ ছিল দু’জনের আলাদা আলাদা। ওষুধ ও তার ডোজ এক হওয়ায়, তা এক জনের কাজে লেগেছে, অন্য জনের লাগেইনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, একই ওষুধে থ্যালাসেমিয়ার এক-এক জন রোগীর ভালো থাকার গুণগত মান যে এতটা আলাদা, তার কারণটা যত না চিকিত্সাজনিত, তার চেয়েও ঢের বেশি রোগনির্ণয় পদ্ধতি বা ডায়গনস্টিক-জনিত। কার কোন অঙ্গে কতটা লোহা জমেছে, সেটা বের করাই যে দুর্লভ! এ বার যাতে সহজে তা নির্ণয় করে চিকিত্সার মানটা এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়ানো যায়, তার রাস্তা খুঁজে বের করেছেন কলকাতার দুই চিকিত্সক প্রশান্ত চৌধুরী ও মানস সাহা। এমআরআই বা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিংয়ের ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে শরীরের যে কোনও অঙ্গের আয়রন ওভারলোড প্রায় নির্ভুল ভাবে নির্ণয় করার রাস্তা বাতলে দিয়ে সম্প্রতি তাঁরা আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক মহলে। হিমোগ্লোবিন নিয়ে গবেষণার বিশ্বমঞ্চে ‘পোস্টার প্রেজেন্টেশন ’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে তাঁদের গবেষণাপত্রটি। আগামী ১৩ মার্চ ‘গ্লোবাল আয়রন সামিট ’-এর মঞ্চে তাঁদের পোস্টার নিয়ে বার্লিন পাড়ি দিচ্ছেন প্রশান্তবাবু। প্রশান্তবাবুর ব্যাখ্যা, ‘যাঁরা অল্প সময়ের ব্যবধানে রক্ত নেন নিয়মিত, তাঁদের শরীরে জমতে থাকে লোহা। ডাক্তারি পরিভাষায়, আয়রন ওভারলোড।

থ্যালাসেমিয়া, রক্তের ক্যানসার বা তার আগের পর্যায়ের অসুখ, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া ইত্যাদির শিকার যাঁরা, তাঁদের মূল চিকিত্সার একটা বড় অংশই ব্যাহত হয় এই জমে যাওয়া লোহা ঠিকঠাক না-বের করা গেলে। অথচ কোন অঙ্গে কতটা লোহা জমেছে, তা নির্ণয় করার সুলভ পরীক্ষাটির ফল নির্ভুল নয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। আবার নির্ভুল পরীক্ষাটির খরচ প্রায় লাখ টাকা।’ এ বার সেই পরীক্ষাটিই হাজার পাঁচেক টাকা খরচে কী ভাবে করা যায় নির্ভুল ভাবে, তার পথ খুঁজে পেয়েছেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ প্রশান্তবাবু এবং রেডিয়োডায়গনিস্টক বিশেষজ্ঞ মানসবাবু। মানসবাবুর দাবি, ‘যে অঙ্গের যত বেশি বিকিরণ, সেখানে তত বেশি লোহা জমে। এই হিসেব কাজে লাগিয়েই ওভারলোডের পরিমাণ নির্ণয় করার রাস্তা খুঁজে পেয়েছি আমরা।’ প্রশান্তবাবু জানাচ্ছেন, ওঁদের ব্রাজিলীয় বন্ধু, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জুলিয়ানো লারা ফার্নান্ডেজের সাহায্যে গত তিন বছর ধরে তাঁরা গবেষণা চালিয়েছেন। অন্তত ১৫০ রোগীর (আয়রন ওভারলোড নিয়ে এ যাবৎ সব চেয়ে বেশি রোগীর উপর চালানো পরীক্ষা বলে দাবি) উপর পরীক্ষামূলক ভাবে এই এমআরআই-নির্ভর পরীক্ষা চালানো এবং প্রতিটি রিপোর্ট বিদেশের স্কুইলড পরীক্ষার সঙ্গে যাচাই করে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন তাঁদের সাফল্যে। কলকাতার বিশেষজ্ঞ মহল এই গবেষণাকে সাধুবাদ জানালেও এর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে সন্দিহান। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রেডিয়োডায়গনস্টিক বিভাগের প্রধান অশোক ভদ্র বলেন, ‘যুগান্তকারী কাজ। থ্যালাসেমিয়া-সহ বিভিন্ন রক্তরোগের চিকিত্সায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এই গবেষণা। আগামী দিনে এই প্রোটোকল স্বীকৃত হওয়ার পর যদি সরকারি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত হয়, তা হলে খরচ এরও অর্ধেক হয়ে যাবে।’ রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ আশিস মুখোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, ‘এ দেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীরা যে আর্থসামাজিক পরিবেশ থেকে আসেন, তাঁরা চিকিত্সার ন্যূনতম খরচটাই অনেক সময় বহন করতে পারেন না। সেখানে ডায়গনস্টিকের পিছনে টাকা খরচ করে চিকিত্সা চালাতে ক’জন রোগী আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে।’

সূত্র : অনির্বাণ ঘোষ, এই সময়, ৩ মার্চ ২০১৫

সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/1/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate