এই অবস্থায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, প্রায় ২০ বছর হাসপাতালে থাকার পরে ছাড়া পেয়ে একটি মানুষ কোথায় যাবেন? বিশেষত যখন তাঁর আত্মীয়েরা তাঁকে নিতে চাইছেন না?
তপনবাবু জানান, এ ব্যাপারে আগে থেকেই ব্যবস্থা করা আছে। ওই হাসপাতালে সরকারি অনুমতির ভিত্তিতে যে-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করে, তারাই পাইকপাড়ার বাসিন্দা রূপশ্রী রায় নামে এক মহিলার বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে মীরাদেবীর চাকরির ব্যবস্থা করেছে। সংগঠনের তরফে শুক্লা দাসবরুয়া জানান, রূপশ্রীদেবীর সঙ্গে লিখিত চুক্তি করে মীরাদেবীর মাসিক বেতন ঠিক হয়েছে এবং মাসে এক বার মীরাদেবীকে হাসপাতালে চেক-আপে আনতে সম্মত হয়েছেন রূপশ্রীদেবী। তিনি এ দিন দুপুরেই হাসপাতালে এসে মীরাদেবীকে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, “উনি আমার পরিবারের অংশ হয়েই থাকবেন।”
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জনবাবুর কথায়, “যে-ভাবে সরকারি মানসিক হাসপাতালে ফেলে রাখা সুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল, তাতে একটু সাহসী হয়ে এই পদক্ষেপ আমাদের করতেই হত। নইলে আর কোনও শয্যা খালি হবে না। নতুন কেউ ওই সব হাসপাতালে ভর্তিও হতে পারবেন না।” তিনি জানান, আইনে রোগীর আবেদনের বিষয়টি বিবেচনার কথা বলাই আছে। তাই কোনও অসুবিধা নেই। মানসিক রোগীদের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত রত্নাবলী রায়ের ব্যাখ্যা, দেরিতে হলেও সরকার শেষ পর্যন্ত মানসিক হাসপাতালে ‘ভলান্টারি ডিসচার্জ’ প্রক্রিয়া চালু করল। এটা প্রশংসনীয়। সুস্থ হওয়ার পরেও বাড়ির লোক অনুমতি দিচ্ছে না বলে একটি মানুষ মানসিক হাসপাতালে আটকে থাকবেন, এটা চলতে পারে না।
কিন্তু মাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মৃদুলবাবু সই করতে চাননি কেন?
মাকে বাড়ি ফেরালে পরিবারের অন্যেরা আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দিতেন,
জবাব পুত্রের।
শুনে মুখ অন্ধকার হয়ে যায় মীরাদেবীর। মাথা নিচু করে বলেন, “আমার আবেদনে স্বাস্থ্য দফতর সাড়া দিয়েছে, এটাই অনেক। অনাত্মীয়েরাই এখন থেকে আমার আপনজন।”
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/10/2020