চিরায়ত জ্ঞানের নানান প্রকারভেদ থাকেলও অর্থনীতিক দিক থেকে মূল্যবান সেগুলিই যেগুলির সঙ্গে যুক্ত কোনও জৈব সম্পদ। এর কারণ এগুলি থেকেই তৈরি হয় অমূল্য সব ওষুধ, এগুলিই আমাদের খাদ্যের জোগানদাতা। ফলে জৈব সম্পদে সমৃদ্ধ যে সমস্ত দেশ, চিরায়ত জ্ঞানের সুরক্ষার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ সে সমস্ত দেশের ক্ষেত্রেই। ভারত এমনই একটি দেশ। আর জৈব সম্পদে সমৃদ্ধ অন্য সব দেশের মতোই ভারতও ইতিপূর্বে কখনও তার এই অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণের কথা ভাবেনি। অথচ পৃথিবীতে মেধাসম্পদ সংরক্ষণের সূত্রপাত কিন্তু হয়ে গেছে আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগেই। তা সত্ত্বেও আদি জনগোষ্ঠীগুলির মেধাজাত এই সৃষ্টিগুলিকে সুরক্ষিত রাখার উদ্যোগ না নেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে আজ। চুরি হয়ে যাচ্ছে জৈব সম্পদের ব্যবহার সংক্রান্ত জ্ঞানগুলি, যাকে বলা হচ্ছে জৈব দস্যুতা।
ভারত জৈব দস্যুতার প্রথম শিকার হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপি মেডিক্যাল সেন্টার একটি পেটেন্ট অর্জন করে আমেরিকার পেটেন্ট অফিসের কাছ থেকে। হলুদের ব্যথানাশক গুণটির উপরই পেটেন্টটি প্রদান করা হয়েছিল। হলুদের এই ব্যবহার আদতে ভারতেরই কোনও প্রাচীন জনগোষ্ঠীর। অর্থাৎ এটি ভারতের চিরায়ত জ্ঞান ভাণ্ডারের একটি সম্পদ।
হলুদ দিয়ে শুরু। তার পর একে একে নিম, গোলমরিচ, অড়হর, বাসমতী চাল, আদা, করলা — জৈব দস্যুতার শিকার হয় ভারতের এই সব গেঁয়ো গাছগাছালি। এক একটি পেটেন্ট অধিকার বাতিল করতে গড়পড়তা পাঁচ থেকে সাত বছর আর কুড়ি থেকে ষাট লক্ষ ডলার গাঁটের কড়ি বেরিয়ে যায়। টাকা এবং সময়ের এই গচ্চাই অবশেষে টনক নড়িয়েছে। চিরায়ত জ্ঞানগুলির একটি লিখিত তথ্য ভাণ্ডার থাকলে চৌর্য বৃত্তির এই ঘটনাগুলি ঘটত না। এই বোধ থেকেই গড়ে তোলা হয়েছে ট্র্যাডিশনাল নলেজ ডিজিটাল লাইব্রেরি (টিকেডিএল)।
কোনও আবিষ্কারের জন্য যখন কেউ পেটেন্ট দাবি করে আবেদন করে, পেটেন্ট অফিস তখন দলিল দস্তাবেজ খুঁজতে বসে — এমন আবিষ্কার আগে কেউ কখনও করেছে কি না, তার কোনও লিখিত নথি আছে কি না। যদি থাকে তা হলে প্রাথমিক স্তরেই বাতিল হয়ে যায় আবেদন। যদি না থাকে বা যদি তেমন কোনও নথি খুঁজে না পায় পেটেন্ট অফিস, তা হলে পেটেন্ট মঞ্জুর করা হয়। সে ক্ষেত্রেও অবশ্য পরবর্তী কালে নাকচ করানো যায় সেই পেটেন্ট। লিখিত নথি জোগাড় করে পেটেন্ট অফিসে গিয়ে প্রমাণ করতে হয় আবিষ্কারটির প্রাক অস্তিত্ব। প্রমাণ করতে পারলে মঞ্জুরীকৃত পেটেন্ট বাতিল করে দেয় পেটেন্ট অফিস। এই দ্বিতীয় রাস্তাটি কতটা সময়বহুল ও ব্যয়বহুল তা জৈব দস্যুতার ঘটনাগুলি থেকেই প্রমাণিত। টিকেডিএল-এর জন্ম এই খরচ আটকাতে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/23/2020