আমরা আগেই জেনেছি মহাবিশ্বে শক্তি বিভিন্ন রূপে বিরাজ করে এবং এই বিভিন্ন রূপ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
একজন ভার উত্তোলক বিভিন্ন খাবার গ্রহণের ফলে তার খাবারগুলো প্রথমে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে তিনি যখন ভারটিকে উঠাতে চেষ্টা করছেন তখন সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি গতি শক্তিতে পরিবর্তিত হতে থাকে । এরপর তিনি যখন ক্রমশ ভারটিকে মাথায় তুলছেন তার গতিশক্তি ক্রমশ: স্থিতি শক্তিতে পরিণত হতে থাকে। আবার যখন তিনি ভারটিকে নিচে ফেরে দিচ্ছেন তখন স্থিতি শক্তি গতি, শব্দ ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কারণ ভার মাটিতে পড়ার সাথে শব্দ উৎপন্ন হয় এবং ভারটিতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে দেখা যাবে সেটি গরম লাগছে। অর্থাৎ আমাদের শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে নানাবিধ শক্তির রূপান্তর ঘটছে।
এভাবেই শক্তির বিভিন্ন রূপ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থাকে। আসলে প্রকৃতির সকল ঘটনাকে শক্তির রূপান্তর হিসাবে ধরা যেতে পারে। নিম্নে শক্তির রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:
হাত দিয়ে শরীরের অন্য কোন অংশ ঘষলে গরম অনুভূত হয়। এতে যান্ত্রিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বাঁশি বাজালে যান্ত্রিক শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপাšতরিত হয়। এক খন্ড পাথরের উপর একটি ধাতব দন্ড দ্বারা জোরে আঘাত করলে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বের হতে দেখা যায় এবং এক ধরনের শব্দেরও সৃষ্টি হয়। ধাতব দন্ড ও পাথর খন্ডটি খানিকটা উত্তপ্ত হয়। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি তাপ শব্দ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একটি ঢেঁকি দিয়ে ধান ভানার সময় এতে যান্ত্রিক শক্তি শব্দ ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
গরম ইস্ত্রি দিয়ে জামা কাপড় ইস্ত্রিকরা যায়। এক্ষেত্রে তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বাষ্পীয় ইঞ্জিনে তাপের সাহায্যে উৎপন্ন শক্তি ব্যবহার করে রেলগাড়ি ইত্যাদি চালানো হয়। এখানেও তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
হ্যারিকেনের চিমনিতে হাত দিলে গরম অনুভূতহয়। আসলে আলোক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফটোগ্রাফিক কাগজের উপর আলোর ক্রিয়ার ফলে আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
ঔষধের কারখানায় শব্দোত্তর তরঙ্গের সাহায্যে জীবাণু ধ্বংস করা হয়। এছাড়া শব্দোত্তর তরঙ্গ দ্বারা জামাকাপড়ের ময়লাও পরিষ্কার করা হয়। এসব ক্ষেত্রে শব্দ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। অনুনাদের সময় শব্দ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আবার টেলিফোন রেডিওর প্রেরক যন্ত্রেশব্দ শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিণত করে।
লোহাকে দ্রুত ও বারবার চুম্বক এবং বিচুম্বকণকালে তাপ উৎপন্ন হয়। এতে চৌম্বক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাছাড়া তড়িৎ চুম্বকের সাহায্যে ভারী জিনিসপত্র উঠানো যায়। এতে চৌম্বক শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
বৈদ্যুতিক ইস্ত্রিতে বিদ্যুৎ চালনা করলে তাপ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎশক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে পাখা ঘুরতে থাকে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্ত রিত হয়।
কয়লা পোড়ালে তাপ উৎপন্ন হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেও তা ঘটে। এক্ষেত্রে রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সাধারণত বিদ্যুৎ কোষে রাসায়নিক দ্রব্যের বিক্রিয়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে রাসায়নিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া কয়লা, পেট্রোল, কেরোসিন, গ্যাস পুড়িয়ে রাসায়নিক শক্তিকে আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পারমাণবিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়।
সৌর চুলি−র মাধ্যমে সৌরশক্তিকে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত করে রান্না করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন পকেট ক্যালকুলেটর, রেডিও ইলেকট্রনিক ঘড়িতে সৌর শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে ব্যবহার করা হয়।
সূত্র: বিকাশপিডিয়া বাংলা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/5/2024