গ্রামীণ ভারতের রীতি অনুযায়ী বাড়ির কাজ, ক্ষেতের কাজের বেশিটাই মহিলারাই করেন। কিন্তু সন্তোষকে আর মাঠে গিয়ে কাজ করতে হয় না। কারণ বাড়িতেই তিনি বেজায় ব্যস্ত। যখন ১৭ মাসের বাচ্চাকে দেখতে হয় না, তখন তাঁকে গরু-মোষের দেখভাল করতে হয়, গরুর দুধ দুইতে হয়, বাড়ির লাগোয়া ছোট মুদির দোকান সামলাতে হয়, পাশাপাশি চলে সৌর লণ্ঠন মেরামাতির কাজ।
বুদ্ধিমতী, আত্মপ্রত্যয়ী সন্তোষ কিন্তু কলেজের প্রথম দিনটিতে বেশ একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন – “আমার মনে হয়েছিল যা শেখানো হচ্ছে তার কিছুই বোধহয় বুঝতে পারব না, নিজের হাতে করা তো দুরস্ত। আমি জানতামই না যে সৌর আলোর সাহায্যে রাতে বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব। গ্রামবাসীদের মতো আমিও গোড়ায় একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।”
সন্তোষ সৌর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর থেকে পরিবারের আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “আগে যখন মাঠে কাজ করতাম তখন সারা দিন খাটনির পর পড়িমড়ি করে বাড়িতে আসতে হত কারণ সূর্যের আলো থাকতে থাকতে রাতের খাবার রান্না করতে হবে। নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল না।” কলেজে থাকার সময় সন্তোষদের শেখানো হয়েছে কী ভাবে কালার কোড মিলিয়ে পারমুটেশন-কম্বিনেশনের মাধ্যমে তারগুলি চিনে নিতে হয়। এ সব মনে রাখার ব্যাপার। এর জন্য লেখাপড়া জানার প্রয়োজন হয় না।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের, বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি এমন গ্রামের ৩৫ বছরের উপর যে কোনও মহিলা বেয়ারফুট কলেজে আন্তজার্তিক পাঠক্রমের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। তবে তাঁর গ্রামের সমর্থন থাকা চাই। একটা বড় চারকোণা কর্মশালায় ক্লাস হয়। মাঝখান দিয়ে একটা লম্বা টেবিল। সেই টেবিল ঘিরে নিজস্ব কালার শিট ও প্যানেল নিয়ে মহিলারা বসেন।
আবার ফিরে যাই বালাজি-কা-ধানি গ্রামটিতে। সন্তোষ ততক্ষণে ছাদ থেকে নেমে এসেছেন। লাজুক কন্ঠে জানালেন, তাঁর একটা টিভি, গম ভাঙার গ্রাইন্ডার আর স্বামীর জন্য একটা মোটরবাইক কেনার খুব শখ। স্বামীকে রোজ দশ কিলোমিটার হেঁটে কাজে যেতে হয়। এই অবস্থা পাল্টাতে চান তিনি। সৌরশক্তির ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর এই ছোট ছোট স্বপ্নগুলির কোনওটাই আর অধরা নয়। গর্বের সঙ্গে সন্তোষ জানান, “কোনও দিন যে সত্যিই কিছু করতে পারব তা ভাবতেই পারিনি।”
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/22/2019