রাজস্থানের বেয়ারফুট কলেজের মহিলা গ্র্যাজুয়েট সন্তোষ দেবী এক জন সৌর ইঞ্জিনিয়ার।
তাঁর উজ্জ্বল হলুদ এবং কমলা রঙের শাড়ির আঁচল মাথায় বেশ ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে সন্তোষদেবী বাড়ির ছাদে উঠলেন তাঁর সোলার প্যানেল পরিষ্কার করতে। তাঁর একতলা বাড়ির মাথায় বসানো ঝকমক করে ওঠা সোলার প্যানেলটি বছরখানেক হল বসানো হয়েছে, গোটা গ্রামে তা এক উজ্জ্বল দৃশ্য। রাজস্থানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সি এই অর্ধশিক্ষিত নারী ভারতের কট্টর জাত ব্যবস্থাকে ভেঙে হয়েছেন দেশের প্রথম দলিত নারী সৌর ইঞ্জিনিয়ার।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তোষকে গ্রামের উচ্চবর্ণের মানুষদের হয় এড়িয়ে চলতে হত আর নয় তো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকতে হত। এখন সেই সব মানুষই তাঁর কাছে সাহায্য চায়। সন্তোষের মন্তব্য, “ওঁদের কাছে আমি এখন সৌর ইঞ্জিনিয়ার, যে সৌর আলো সারাতে পারে, লাগাতে পারে। ছোটবেলায় উচ্চবর্ণের লোকেরা চোখের দিকে তাকালে চোখ নামিয়ে নিতাম। আর আজ? ভাবতেই পারি না এ জিনিস কোনও দিন সম্ভব হবে।”
সন্তোষ তিলোনিয়ার বেয়ারফুট কলেজ থেকে সৌর ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কলেজটি জয়পুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। ১৯৭২ সালে সঞ্জিত ‘বাঙ্কার’ রায় এই কলেজটি তৈরি করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল লিঙ্গ, জাতি, বর্ণ, বয়স এবং শিক্ষা নির্বিশেষে গ্রামীণ মানুষজনকে দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষিত করা যাতে তাঁরা তাঁদের গ্রামকে পরিবর্তিত করতে পারেন। আট একর জায়গা জুড়ে কলেজটি, গোটাটাই চলে সৌরশক্তির সাহায্যে। আর এই সৌরশক্তি রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করেন ‘খালি পায়ের’ সৌর ইঞ্জিনিয়াররা। ২০০৫ সালে সৌরশক্তি সম্পর্কিত পাঠক্রম চালু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ৩০০ ‘খালি পায়ের’ সৌর ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করেছে কলেজ এবং এঁরা সারা ভারত জুড়ে ১৩ হাজার বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া আফগানিস্তান, উগান্ডার মতো ২৪টি দেশের ১২০ গ্রামের ৬ হাজার বাড়ি একই মডেলে আলোকিত করেছেন এঁরা।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/23/2020