বৈদ্যুতিন বর্জ্য নিয়ে সরকারি প্রকল্প এখনও ফাইলবন্দি। তবে নেট প্রযুক্তির হাত ধরে বাড়তে থাকা বৈদ্যুতিন বর্জ্য ইতিমধ্যেই সংগ্রহ এবং তা সঠিক দামে নিলাম করতে শুরু করেছে কলকাতারই স্টার্ট আপ সংস্থা।
গত বছরের মে মাসে শুরু হয়েছে ‘অবশেষ’ নামে এই সংস্থা। ২০১৩-এ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা অঙ্কিত অগ্রবাল কলেজে থাকতেই বৈদ্যুতিন বর্জ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পাশ করার পর আইআইটি কানপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অভিনব প্রতীকের সঙ্গে জোট বেঁধে তৈরি করেন সংস্থা। কুড়ির কোঠায় থাকা দুই কর্ণধারেরই দাবি, প্রায় কোনও পুঁজি ছাড়াই এই ব্যবসা শুরু হয়েছে। কলকাতা, ভুবনেশ্বর সহ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি দিল্লিতেও ব্যবসা ছড়িয়েছে আট মাসের এই সংস্থা। অভিনব জানান, দেশের অন্যান্য বড় শহরেও পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে পুঁজি ছাড়া সম্প্রসারণের পথে আর এগোনো সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। ফলে এ বার উদ্যোগ-পুঁজির খোঁজে নেমেছেন অঙ্কিত ও অভিনব।
সংস্থা কর্তৃপক্ষের দাবি, আপাতত কর্পোরেট মহল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে আট মাসের পুরনো এই সংস্থা। কী ভাবে কাজ করে সংস্থা? ‘অবশেষে’র ওয়েবসাইটে যে কোনও সংস্থাকে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। সেই সঙ্গে জানাতে হবে সংস্থার বৈদ্যুতিন বর্জ্যের পরিমাণ ও তার বিস্তারিত বিবরণ। এ বার সেই বর্জ্যের মূল্যায়ন করে নিলাম ডাকবে সংস্থা। বর্জ্য সংগ্রহ, মূল্যায়ন ও নিলাম করার দায়িত্ব তাঁদের বলে জানান অভিনব।
২০১২ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকার বৈদ্যুতিন বর্জ্য সংক্রান্ত আইন তৈরি করে। দূষণ এড়াতে এই বর্জ্য সঠিক ভাবে শোধন করা জরুরি বলে মনে করেন বিশষেজ্ঞরা। কিন্তু সংগঠিত ক্ষেত্রে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। মাত্র ৫ শতাংশ সংগঠিত ক্ষেত্রের আওতায় রয়েছে। বাকি ৯৫ শতাংশ অসংগঠিত ক্ষেত্রে চলে যায়। সংগঠিত ই-বর্জ্য প্রকল্পের অভাবে বাড়ছে দূষণ। বাড়ছে এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও। গোটা দেশে অন্তত সাড়ে চার লক্ষ শিশু শ্রমিক এই বর্জ্য সংগ্রহের কাজে যুক্ত।
বৈদ্যুতিন বর্জ্যের পরিমাণ দেশ জুড়েই লাফিয়ে বাড়ছে। বণিকসভা অ্যাসোচেমের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারতে সাড়ে ১২ লক্ষ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়। ২০১৫-এ দেশে ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন। বর্জ্য তৈরির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মুম্বই। ৯৬ হাজার মেট্রিক টন পাওয়া যায় মুম্বই শহরে। দিল্লি তার পরেই। ৬৭ হাজার মেট্রিক টন। কলকাতা তুলনায় কম হলেও ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ই-বর্জ্য এখানে পাওয়া যায়।
পূর্বাঞ্চলে সংগঠিত ই-বর্জ্য প্রকল্প নেই বললেই চলে। ২০১২ সালে এ রাজ্যে বৈদ্যুতিন বর্জ্য হাব তৈরি করার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। তবে পরিকল্পনা দানা বাঁধে ২০১৩-য়। শ্রেয়ি ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মতো বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে লগ্নির প্রস্তাবও আসে। তবে এখনও এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্যে তেমন অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি। কলকাতার পার্শ্ববর্তী জেলায় যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে এ ধরনের প্রকল্প করার ব্যাপারে জমির খোঁজ চলেছে।
সূত্র : গার্গী গুহঠাকুরতা, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020