যুগ যুগ ধরে দুই বাংলার গ্রামাঞ্চলে রান্নাবান্নার কাজে কাঠ, খড়কুটো, নাড়া, শুকনো গোবর, এগুলোই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩ কোটি ৯০ লক্ষ মেট্রিক টন এ জাতীয় জ্বালানির প্রয়োজন। জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারের ফলে গাছপালা উজাড় হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে আমরা শুধু বনজ সম্পদই হারাচ্ছি না, আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছি এক ভয়াবহ অবস্থার দিকে। অন্য দিকে গোবর, নাড়া এবং অন্যান্য পচনশীল পদার্থগুলো পুড়িয়ে ফেলার ফলে আবাদি জমি জৈব সার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জ্বালানি সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। এই জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাসই একমাত্র এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে এবং নিশ্চিত করতে পারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, উন্নতমানের জৈব সার, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও উন্নত জীবনযাত্রা।
গোবর ও অন্যান্য পচনশীল পর্দাথ পচানোর ফলে যে জ্বালানি গ্যাস তৈরি হয় তাই হচ্ছে বায়োগ্যাস। এতে ৬০/৭০ ভাগ জ্বালানি গ্যাস তৈরি হয়ে অবশিষ্ট অংশ উন্নতমানের জৈবসার হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। জ্বালানি গবেষকরা বলছেন, মানব বিষ্ঠা, মোরগ-মুরগীর বিষ্ঠা, জৈব আবর্জনা এবং গোবর থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন সম্ভব। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ জাতীয় পর্দাথ থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করে কলকারখানা এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বায়োগ্যাস ব্যবহার এবং উৎপাদনে চিন সব চেয়ে এগিয়ে আছ। ভারতেও বায়োগ্যাসের প্রচলন রয়েছে। গৃহস্থালি রান্নাবান্না এবং ম্যান্টেল বাতি জ্বালানো ছাড়াও বায়োগ্যাস দিয়ে জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাতি, ফ্যান, ফ্রিজ, টিভিসহ অন্যান্য বৈদুত্যিক সরঞ্জামাদি চালানো সম্ভব। গবেষকরা বলছেন, ৭-৮ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের জন্য ৫-৬ টি মাঝারি আকারের গরুর দৈনন্দিন গোবর থেকে ১০৫ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সম্ভব যা দিয়ে তিন বেলার রান্না-বান্না সহ একটি ম্যান্টেল বাতি জ্বালানো যাবে।
জ্বালানি সংকট সমাধানে এই মাধ্যমটিতে এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এর প্রসার ঘটেনি বাংলাদেশের এতটুকুও। বাংলাদশে বিজ্ঞান ও গবেষণা পরিষদের জ্বালানি গবেষণা ও গোড়ার ইনস্টিটিউট এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে অনেক বছর ধরে।
কী ভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করব, এর কারিগরি তথ্য কোথায় পাব, এর নির্মাণ ব্যয় কত হবে ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
তথ্যসূত্র: অ্যাগ্রো বাংলা ডট কম, শেখ সিরাজ রচিত বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020