প্রচলিত ধারণা: ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থা এত বেশি মেধাবী ছাত্র তৈরি করে যে সারা বিশ্বের এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। এর ফলস্বরূপ অনেক মেধাবী ছাত্র, বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং পেশাদার সাফল্যের সঙ্গে পশ্চিমের দেশগুলিতে রয়েছে এবং এদের মধ্যে অনেকেই সেই দেশে খুব ভালো কাজ করছে। কঠিন নিয়মানুবর্তিতা ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাই হল সাফল্যের চাবিকাঠি। সব বাবা-মা ই ভালো ফলের আশায় নিজেদের সন্তানদের ভাল স্কুলে দিতে চায়।
বাস্তব : এটাতে কোনও সন্দেহ নেই ভারতে মেধাবী ছাত্রের সংখ্যা অনেক। এর পুরো কৃতিত্ব বর্তমানের স্কুলব্যবস্থার বা শিক্ষাব্যবস্থার নাকি পারিবারিক বা সামাজিক চাপ থাকা স্বত্ত্বেও জীবনে উন্নতি করার ইচ্ছা শক্তির। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা ক্রমেই বাড়ছে। প্রত্যেকটি ভালো স্কুল এবং শিক্ষকদের লক্ষ্য হচ্ছে ভালো ফল। এই অপরিসীম চাপের মোকাবিলা করার ব্যাপারে বাচ্চাদের সাহায্য করার অক্ষমতা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অবসাদ বাড়াচ্ছে। এই অবসাদই আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াচ্ছে। মেধার অবক্ষয় ঘটছে। এই বাস্তব সম্পর্কে এখনও যদি আমরা সচেতন না হই তবে খুব শীঘ্রই এক উজ্জ্বল প্রজন্মকে আমরা হারাব। কিছু কিছু ছাত্রের কাছে দশ বা বারো ক্লাসের পরীক্ষার পরই জীবন শেষ হয়ে যায়। সিবিএসই বোর্ডের দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ৫ দিনের মধ্যেই রাজধানী দিল্লিতে আধ ডজন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। আপনি যখন এই খবরটি পড়ছেন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার জন্য এর মধ্যে আরও অনেকেই হয়তো এই পথ বেছে নিয়েছে।
আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়াটা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আরও গভীর অস্থিরতার প্রতিফলন। “অতীতে বয়ঃসন্ধির সঙ্গে অবসাদকে যুক্ত করে দেখা হত না। অতি সম্প্রতি এই উপলব্ধির জন্ম হয়েছে, বয়সন্ধির সময়ও অবসাদ হয়ে থাকে। ” এ কথা বলেছেন ডঃ আর সি জিলোহা, অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান, জি বি পন্থ ও মৌলনা আজাদ মেডিক্যাল কলেজ। এই ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণ হল, বয়সন্ধির সময়টা এমন একটি সময় যখন এদের প্রাপ্তবয়স্ক বলা যায় না আবার শিশুর পর্যায়েও ফেলা যায় না।
......... জনৈকা টেলি কাউন্সিলর শ্রীমতি শর্মা বলেন, কাউন্সিলিং-এর প্রয়োজনটা মেনে নেওয়া, বাবা-মায়ের এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার পক্ষে খুবই জরুরি । ........... পরীক্ষার ফলাফলই জীবনের শেষ কথা নয়। খারাপ ফলাফলের পরও জীবন পড়ে রয়েছে। এ কথাটা বাবা মা এবং শিক্ষকদের বুঝতে হবে” ।
সূত্র : স্মৃতি কাক, দ্য ট্রিবিউন , চণ্ডীগড়, ৩১ মে ২০০২।
এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, সব অভিভাবকই এমন স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চান, যেগুলিতে ভালো রেজাল্ট হয়। কিন্তু কেউ কি তাঁদের এ প্রশ্ন করেছেন, এই ব্যাপারটা সন্তানদের সুস্থ থাকা, এমনকী বেঁচে থাকার থেকেও জরুরি কি না ? কোনও অভিভাবকই তাদের ছেলে মেয়েকে হারাতে চান না। এর থেকে এটাই বোঝা যায় যে অভিভাবক বা বাবা-মায়েরও কাউন্সিলিং অবশ্যই দরকার। যদি স্কুলের চাপ ক্রমবর্ধমান হয় আর সব অভিভাবক-শিক্ষক সম্মেলনেই যদি এই আলোচনাই হয় যে, ছেলেমেয়েরা কত ভালো অথবা খারাপ করছে তাদের ক্লাসে, যদি শিক্ষকরা অনবরত ছাত্রছাত্রীর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করেন এবং আবেগের দিক ও মানসিক দিকগুলিকে অবহেলা করেন, তা হলে কোনও কিছুই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। সবার প্রথমে স্কুলগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। হয়তো বা বাচ্চাদের সাথে সাথে বাবা-মায়েদেরও কাউন্সিলিং করাতে হবে স্কুলগুলিকে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/2/2019