নির্বাক ছবি নির্মাণের প্রায় ১৮ বছর পর ১৯৩১ সালের ১৪ মার্চ মুক্তি পায় আরদেশির ইরানি পরিচালিত ‘আলম আরা’ ছবিটি যা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। এ ছবির ‘দে দে খোদা কে নাম পার’ গানটি উপহাদেশের সিনেমায় ব্যবহৃত প্রথম গান। গানটি গেয়েছিলেন ওয়াজির মোহাম্মদ খান, যিনি ওই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। গানটি চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় শুধুমাত্র একটি হারমোনিয়াম এবং তবলা বাজিয়ে সরাসরি ধারণ করা হয়েছিল। চলচ্চিত্রটিতে সংলাপ কম, গান ছিল বেশি যা পরবর্তীতে উপমহাদেশ তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনে সঙ্গীতর্নিভর চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
আরদেশির ইরানি তারান সাউন্ড সিস্টেমের সাহায্যে শব্দগ্রহণের কাজ করতেন। তানার সিঙ্গেল-সিস্টেম ক্যামেরার সাহায্যে চিত্রগ্রহণের কাজ করা হতো, একই সময়ে চলচ্চিত্রে সরাসরি শব্দগ্রহণও করা হতো। তখনকার সময়ে সাউন্ডপ্রুফ স্টোডিও ছিল না, ফলে দিনের সোরগোল এড়ানোর জন্য চলচ্চিত্রের বেশির ভাগই চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে রাতে, যেখানে অভিনেতাদের পাশের মাইক্রফোন আড়াল করে রাখা হতো।
চলচ্চিত্রটিতে সঙ্গীত দেন ফিরোজশাহ এম. মিস্ত্রি এবং বি. ইরানি এবং এতে ৭টি গান রয়েছে:
‘রাজা হরিশচন্দ্র’-এর পর উপমহাদেশের চলচ্চিত্র পার করেছে একশোরও বেশি বছর। এরই মাঝে এসেছে যুদ্ধ-দাঙ্গা, ঘটেছে দেশবিভাগের মতো ঘটনা। উপমহাদেশের চলচ্চিত্র ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পৃথক নাম গ্রহণ করেছে। আর সূত্রপাতটা তত্কালীন বোম্বেতে হওয়ায় ভারতীয় চলচ্চিত্রকে বিশ্ব এখন ‘বলিউড’ নামে চেনে। অনেকটা সময় ধরেই বলিউড রূপান্তরিত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। বলিউডকে সঙ্গ ও শক্তি দিচ্ছে ভারতের অন্যান্য প্রদেশ যেমন কলকাতা, তামিল, তেলুগু আর মালায়ালামের মতো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো। জন্ম দিয়েছে দুনিয়া কাঁপানো অসংখ্য সব ছবি আর তারকার। তাই ভারতীয় চলচ্চিত্র এখন নিজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রবেশ করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, পরিণত হয়েছে অবিশ্বাস্য অর্থ মূল্যের শিল্পে!
সূত্র : নাট্যচিন্তা, শতোত্তরবর্ষে বাংলা চলচ্চিত্র, নভেম্বর ২০১৩-এপ্রিল ২০১৪ সংখ্যা থেকে সংকলিত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/18/2020