উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে সঙ্গীতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। গান অনেক সময় সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনেও বড় ভূমিকা রেখেছে। অশোক কুমারের ‘কিসমত’ ছবির (১৯৪৩) বিখ্যাত গান ‘হে দুনিয়াওয়ালো হিন্দুস্তান হমারা হ্যায়’ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ছিল অন্যতম প্রতিবাদের ভাষা। উপমহাদেশে রেডিওতে চলচ্চিত্রের গান শোনার চলও শুরু সেই ষাটের দশকেই। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের গানগুলো মানুষের জীবনের অংশ হয়ে যায়। আজও তাই উপমহাদেশের চলচ্চিত্রে সঙ্গীত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যুগে যুগে জন্ম হয়েছে কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীর। শৈলেন্দ্র, প্রদীপ, হাশরাত জয়পুরি, মাজরুহ সুলতানপুরি, সাহির লুধিয়ানভি, আনন্দ বক্সি, কাইফি আজমি, গুলজার, জাভেদ আখতার, সামির-এর মতো বাঘা বাঘা গীতিকাররা ভারতীয় সিনেমার জন্য গান লিখে গেছেন। আর তাঁদের লেখা গানে সুর সৃষ্টি করেছেন শচীন দেব বর্মন, নওশাদ আলি, মদন মোহন, অনিল বিশ্বাস, লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল, ও পি নায়ার, শঙ্কর জয়কিশেন, কল্যাণজি আনন্দজি, সলিল চৌধুরী, রাহুল দেব বর্মন, এ আর রহমান-এর মতো সুরের জাদুকররা। আর কিংবদন্তী ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পীর তালিকা করতে গেলে সহজে তা শেষ করা যাবে না। আছেন মুকেশ, মহম্মদ রফি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে থেকে শুরু করে হালের কুমার শানু, উদিত নারায়ণ, সনু নিগাম, হরিহরণ, অভিজিৎ, বাবুল সুপ্রিয়রা। তবে ভারতীয় সিনেমায় সব চেয়ে ভার্সাটাইল শিল্পী হিসেবে নিজেকে যিনি অন্য রকম এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি কিশোর কুমার। ক্লাসিক্যাল, রক থেকে শুরু করে রোমান্টিক, ট্র্যাজেডি যে কোনও ধরনের গানে কিশোর কুমার এক ও অদ্বিতীয়। আর ভারতীয় সিনেমার সঙ্গীতে সব চেয়ে বড় কিংবদন্তির নাম লতা মঙ্গেশকর। নারী শিল্পীদের মধ্যে লতা মঙ্গেশকরের পরেই থাকবেন তাঁর ছোট বোন আশা ভোঁসলে। বর্তমানে অলকা ইয়াগনিক, শ্রেয়া ঘোষাল, সুনীধি চৌহানরা দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছেন ভারতীয় মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রিতে।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য নিয়মিত প্রদান করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তবে চলচ্চিত্রে তাদের সব চেয়ে বড় পুরস্কারটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্বপ্নদ্রষ্টার নামে, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার।
বলিউড বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি। আর এই পর্যায়ে আসতে তাদের কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি। একশো বছর পেরিয়ে আজ তাদের অবস্থান গর্ব করার মতো। এই একশো বছরে যে মজবুত ভিত্তি গড়ে উঠেছে তাতে নি:সন্দেহে বলা যায় ভারতীয় ফিল্ম আরও একশো বছর স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যাবে।
সূত্র : নাট্যচিন্তা, শতোত্তরবর্ষে বাংলা চলচ্চিত্র, নভেম্বর ২০১৩-এপ্রিল ২০১৪ সংখ্যা থেকে সংকলিত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/17/2019