ভারতীয় চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক আসরে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বাঙালি চলচ্চিত্রকারেরা। সত্যজিত রায় ছাড়াও এ তালিকায় আছেন ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তপন সিনহা, ঋতুপর্ণ ঘোষদের মতো কিংবদন্তিরা। এই চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁদের চলচ্চিত্রকর্ম দিয়ে সবার মন যেমন জয় করেছেন তেমনি দেশের বাইরের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে ও পুরস্কার জিতে ভারতের জন্য বয়ে এনেছেন বিপুল সম্মান। তাঁরা ভারতীয় চলচ্চিত্রের শিল্পমানকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন যে বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ভাষাকে বিশ্ব সমীহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু করে।
শুধু তা-ই নয় ভারতীয় চলচ্চিত্রের সব চেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় উত্তম-সুচিত্রা জুটি এসেছে বাংলা সিনেমা থেকেই। কলকাতার বাংলা সিনেমায় উত্তম কুমার মহানায়ক হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়। একই ভাবে অভিনেত্রীদের মধ্যে সুচিত্রা সেনের স্থানও সবার উপরে। এই জুটির অসংখ্য হিট ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারানো সুর, সপ্তপদী, পথে হলো দেরি, চাওয়া পাওয়া, জীবনতৃষ্ণা, সাগরিকা প্রভৃতি।
এ ছাড়াও রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ের জন্য যিনি জিতেছেন বহু জাতীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার। জিতেছেন শ্রেষ্ঠ ভারতীয় চলচ্চিত্র সম্মান দাদাসাহেব ফালকে। এ ছাড়াও অভিনয়ের জোরে যাঁরা বাঙালি দর্শকদের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তুলসী চক্রবতী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, সাবিত্রী দেবী, ছায়া দেবী, ছবি বিশ্বাস প্রমুখ।
বাংলা সিনেমার সেই ‘স্বর্ণযুগ’ কারও কারও মতে আজ আর নেই। প্রযুক্তির বহু উন্নতি হলেও কাহিনি, চিত্রনাট্য, পরিচালনা সব দিক থেকেই বাংলা সিনেমা তার পুরনো গৌরব হারিয়েছে। তবে ভিন্ন মতও আছে। অনেকেই মনে করেন, বাংলা ছবিতে ক্রমেই নতুন ধারার বিকাশ ঘটে চলেছে। কাহিনি , চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নতুন ঘরানা উঠে আসছে। আজকের পরিচালকরা সিনেমা নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। দর্শকদের বহু ক্ষেত্রেই তা ভাল লাগছে।
সূত্র : নাট্যচিন্তা, শতোত্তরবর্ষে বাংলা চলচ্চিত্র, নভেম্বর ২০১৩-এপ্রিল ২০১৪ সংখ্যা থেকে সংকলিত
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/26/2019