দোলযাত্রা উপলক্ষে শান্তিনিকেতনে যেমন বসন্তোৎসব হয়, তেমনই নানা মেলা বসে বাংলার দিকে দিকে। তেমনই একটি কল্যাণীর ঘোষপাড়ার সতীমার দোল মেলা। আউলিয়া সম্প্রদায়ের সতীমা অর্থাৎ সরস্বতী দেবী এই মেলার প্রবর্তন করেন আনুমানিক দু’শো বছর আগে।
খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলার অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে গড়ে ওঠে আউল সমাজ। এই সম্প্রদায়ের আদিগুরু ছিলেন আউলচাঁদ। তাঁর মৃত্যুর পর আউল সমাজের কর্তাপদ লাভ করেন রামশরণ পাল। তাঁরই স্ত্রী ছিলেন সরস্বতী দেবী, যিনি পরবর্তীকালে সতী মা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
এ মেলা জমে ওঠে বাউল, কীর্তন, লোকগীতি, পল্লিগীতির সুরে। আখড়ায় আখড়ায় সারা রাত ধরে বসে গানের আসর। শ্রোতাদের অধিকাংশই গ্রাম ও মফঃস্বলের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয় লালন মঞ্চ। গানের পাশাপাশি বিশাল উনুন জ্বালিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা হয় আখড়াগুলিতে। দূর-দূরান্তের যাত্রীদের আশ্রয়স্থল এই আখড়াগুলি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রামশরণ পালের বংশধরদের জমিতে বসা এই মেলা আয়তনে বেশ বড়। বর্তমানে মেলা পরিচালনার দায়িত্বে আছে কল্যাণী পুরসভা। মেলায় দোকান বসে চার-পাঁচশো। সাত দিনের মেলায় দোলের আগের দিন থেকে পরের দিন এই ২৪ ঘণ্টা মেলা চলে। কল্যাণী সীমান্তগামী ট্রেনের ঘোষপাড়া স্টেশন থেকে মেলার কেন্দ্র ২ কিলোমিটার দূরে হলেও প্ল্যাটফর্ম ছাড়াতেই শুরু হয় কেনাকাটা। মাটি-কাঠ-পাথর-বিবিধ ধাতু-চামড়া-কাপড় ও প্লাস্টিকের সম্ভাবে ভরে থাকে দোকানগুলি। সংগীতশিল্পীদের সঙ্গে আসে বাঁশিওয়ালারাও। থাকে বেতের জিনিস, কাটোয়ার কাঠের পুতুল। থাকে বেনারসের পাথরের দোকান। আর খাবারের দোকান তো আছেই। সারা মেলা জুড়েই মানুষের ভিড়। ভিড়ের চাপে নাভিশ্বাস ওঠে যাত্রীদের। দোলপূর্ণিমার সকালে হয় দেব-দোল। তার পর শুরু হয়ে যায় আবির খেলা। সতী মায়ের ভিটে লাগোয়া এলাকা থেকে মেলাপ্রাঙ্গণ রঙিন হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে। তার পর স্নান খাওয়া সেরে মেলার কেনাকাটা। ততক্ষণে আখড়ায় আখড়ায় জমে ওঠে গানের আসর।
তথ্যসূত্র: বাংলার মেলা, গীতা পালিত ও সুপ্রিয় কর, ঋতি প্রকাশন, বইমেলা ২০০৮
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/21/2020