হাজারদুয়ারি বলুন কিংবা লালবাগ। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। আর সেই গঙ্গার দু’পাশে হাজার হাজার লোকের উল্লাসের মাঝে গঙ্গা দিয়ে বয়ে চলে আলোর ভেলা ‘বেরা’। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলে বাংলার সুবেদার ছিলেন মকররম খাঁ। তাঁর রাজধানী ছিল ঢাকায়। জলপথে যাতায়াত ছিল বাধ্যতামূলক। তেমনি ছিল বন্যার প্রকোপ। তাই এক দিকে জলযাত্রা সুগম করতে অন্য দিকে বন্যারোধে জলের দেবতার উদ্দেশে প্রার্থনা ও নৈবেদ্যের আয়োজনেই বেরার মেলার সূচনা। আবার কারও মতে বেরা শব্দের অর্থ বাঁধ। সেই অর্থে বন্যারোধে পির পয়গম্বরের উদ্দেশে দোয়া মাঙার আয়োজন। এই মেলার প্রবর্তনের মতোই প্রবর্তক নিয়েও মতভেদ আছে। কারও মতে মকররম খাঁ, কারও মতে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সরকারের বিচার বিভাগ এই মেলার আয়োজন করে।
রকমারি খাবারের দোকান, পাশাপাশি মিষ্টি, রোল, চাউমিন, তেলেভাজা, ঘুগনি। খেলনা, প্রসাধনীর পাশাপাশি গাছগাছালির দোকান। এ ছাড়া থাকে মুর্শিদাবাদের গাইড, স্মরণিকা, ছবি। মুর্শিদাবাদের সিল্ক তো আছেই। এক রাতের মেলা, তাই বাণিজ্যিক দিকটা তেমন প্রাধান্য পায় না। যাবতীয় আগ্রহ ওই বেরাকে ঘিরে।
এই বাংলায় বিভিন্ন মুসলিম পরবকে ঘিরে যতগুলো মেলা বসে, বেরার মেলা তাদের থেকে স্বতন্ত্র। তার একটা কারণ হল, এ মেলা নবাবি মেলা। অন্য কারণ হল, এ মেলা অনুষ্ঠিত হয় বাংলা বর্ষপঞ্জির ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার, যেখানে অন্যান্য মুসলিম পরব অনুষ্ঠিত হয় চান্দ্রমাস অনুসারে। তা ছাড়াও গঙ্গায় ভেলা তথা প্রদীপ ভাসানো, আতসবাজির উৎসব প্রভৃতি শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের নয়, হিন্দু-মুসলিম যৌথ সংস্কৃতির এক নিদর্শন, যা একান্তই বাঙালির সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহীও বটে।
মেলার মূল অনুষ্ঠান বেরা ভাসানো শুরু হয় রাত এগারোটায়। মেলা ভাঙার আগেই মুর্শিদাবাদ ছেড়ে চলে যায় রাতের লালগোলা প্যাসেঞ্জার। মধ্যরাতে থাকে না অন্য কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থাও, তাই রাতটা লালবাগে থাকা প্রায় বাধ্যতামূলক। বহরমপুরে থাকতে হলে গাড়ির ব্যবস্থা করে আসতে হবে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/27/2020