গ্রামীণ মেলার কথা উঠলেই আজ বাঙালির চোখে যে ছবি ভেসে ওঠে তা হল রথের মেলা। যদিও গ্রামের গণ্ডি পেড়িয়ে বহু দিন আগেই তা স্থান করে নিয়েছে শহরে –বাজারে। তাই রথ আর মেলা যেন সমার্থক বাঙালি জীবনে। আষাঢ়ের শুক্লা-দ্বিতীয়া তিথিতে বাংলার নানা প্রান্তের মানুষ এ মেলাকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে । রথযাত্রার ইতিহাস বেশ প্রাচীন হলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের রথের মেলা প্রায় দু’শো বছরের পুরনো।
মহিষাদলের জমিদার বংশের রাজা আনন্দলালের স্ত্রী রানি জানকীর উৎসাহে ১৭৭৬ সালে রথযাত্রার শুরু হয়। সেই থেকে অনুষ্ঠিত রথের মেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বড় এবং পূর্ব মেদিনীপুরের সব থেকে বড় মেলা হিসেবে পরিচিত। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও ১৫ দিনের এই মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হত। প্রায় ৭০০ দোকান বসতো।
মেচেদা-হলদিয়া সড়ক পথে মহিষাদলের অবস্থান। হলদিয়া যাওয়ার নতুন বাসস্ট্যান্ড বা মেচেদা যাওয়ার পুরনো বাজার বাসস্ট্যান্ডে নেমে ১০ মিনিট হাঁটলেই রথের মাঠ। বর্তমানে স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত মেলা কমিটি মেলা পরিচালনা করে। বর্তমানে কাঠের পাঁচতলা রথটি তেরো চূড়া বিশিষ্ট। রথের দিন বিকেল তিনটেয় যাত্রা শুরু হয় পটকা ফাটিয়ে। রথের দড়িতে হাত লাগান শয়ে শয়ে পুণ্যার্থী।
এক সময় মেলাকে কেন্দ্র করে আসর বসত পালাগান, কীর্তনের। মৃৎশিল্পের প্রদর্শনীও হত। কলকাতা থেকে আসত যাত্রা। সময়ের সঙ্গে জৌলুষ হারিয়েছে মেলার সংস্কৃতির আসর। মাসির বাড়িতে এখন ছোট করে আসর বসে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়েই। আছে সার্কাস, ম্যাজিকের জায়গায় মোটর সাইকেলের মরণ ঝাঁপ। এ মেলার এখনও প্রধান আকর্ষণ সবং-এর মাদুর। ৫০ থেকে ৫০০ টাকার মাদুর পাওয়া যায় এই মেলায়। থাকে মাটির পুতুল, খেলনা, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের তৈরি ফুলদানি, নাইটল্যাম্প। এ ছাড়া গ্রামীণ জীবনের প্রয়োজন মেটানোর নানা উপকরণ। থাকে ফুল-ফল গাছের চারা। বিক্রি হয় প্রচুর ফল। মেলার অন্যতম আকর্ষণ নানাজাতের পাখির বাজার, বিশেষত পায়রা। দেশি পাখি কেনাবেচা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা ঝুলিয়ে বিক্রি হয় রকমারি লাভ বার্ড ও বিদেশি পাখি।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/22/2020