ভারতবর্ষের মানুষের সঙ্গে খ্রিস্ট ধর্মের পরিচয় পাঁচ-ছশো বছর আগে, ভাস্কো ডা গামার ভারতে আসার মধ্য দিয়ে। পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরাজ জাতির মাধ্যেমে এই ধর্ম বাংলাতেও এসে পৌঁছয়। দু’শো বছরের ইংরাজ শাসনে তা জমি পায়। এই সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় উৎসব খ্রিস্টমাস, যার বাংলা সংস্করণ বড়দিন। বহু বাঙালির কাছে এটা বছরের সেরা বনভোজনের দিন। শহর থেকে গ্রামের দোকানে বাজারে জায়গা করে নিয়েছে বড়দিনের কেক। তবে সব চেয়ে বিস্ময়ের হল এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলায় মেলার আয়েজন। বেগোপাড়ার বড়দিনের মেলা তেমনই একটা। যদিও সব চেয়ে পুরনো ও বড় মেলাটি বসে নদিয়া জেলারই চাপড়ায়। ব্রিটিশ শাসনে বাংলার অন্য অংশের সঙ্গে ইংরাজ তথা খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির ছাপ পড়েছিল কৃষ্ণনগর ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলে। মিশনারিদের মাধ্যমে এ অঞ্চলে যেমন পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে, তেমনই প্রভাব পড়ে ধর্মীয় সামাজিক পরিমণ্ডলে। তৈরি হয় কৃষ্ণনগর গির্জা।
রানাঘাট স্টেশন থেকে কলকাতার দিকে তিন কিলোমিটার পথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বেগোপাড়ার অবস্থান। এই অঞ্চলের অনেকেই চাকরি সূত্রে বিদেশে থাকেন। তাই স্বচ্ছলতার চেহারাটি নজর এড়ায় না। এলাকায় রয়েছে গোয়াদাল্যুপ মাতা মেরির গির্জা। এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এটি অঞ্চলের চতুর্থ গির্জা। একে কেন্দ্র করেই ২৫ ডিসেম্বর পালিত হয় বড়দিনের উৎসব। আর পাঁচটা এলাকার বড়দিনের উৎসবের মতই এখানেও ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে যায় উৎসব। সেজে ওঠে গোটা পাড়া।
২৫ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি, এই সাত দিন ধরে চলে এই মেলা। মেলার বাজার বসে গির্জার মাঠেই। মামুলি কিছু নকল গয়নার দোকান, আধুনিক খেলনা, লটারি ছাড়া থাকে না তেমন কিছু। এ ছাড়া থাকে খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। গির্জা প্রাঙ্গণে বসে গানের আসর। যিশুর বন্দনা হয় বাউল সুরে। রানাঘাট সন্নিহিত অঞ্চলে বেগোপাড়ার খ্রিস্টপুজোর মেলা সবচেয়ে বড় মেলা। তাই স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও আশেপাশের অঞ্চল থেকে বহু লোক এই মেলায় অংশ নেয় জাতিধর্ম ভুলে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/28/2020