গঙ্গাবোধে অজয় নদে পুণ্যস্নানের মতোই মকর সংক্রান্তিতে পূণ্য স্নান হয় উত্তরবঙ্গের তিস্তাতেও। দার্জিলিং জেলার সিকিম লাগোয়া ত্রিবেণিমাঈ নামে এক জায়গায় তিস্তায় মিশেছে রঙ্গিত। মকর সংক্রান্তির দিন পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সেই সংগমে স্নান করে পুজো দেয়। তাকে ঘিরে জমে ওঠে মাঈ মেলা অর্থাৎ বেনির মেলা। কোন অদূর বা সুদূর অতীত থেকে এই মেলার আয়োজন তা অবশ্য জানা যায় না।
শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং-গ্যাংটকের রাস্তায় দেড় ঘণ্টার পথ তিস্তাবাজার। তিস্তার কোলে ছোট সাজানো এক পাহাড়ি গঞ্জ। সেখান থেকে ২-৩ কিলোমিটার উত্তরে ত্রিবেণিমাঈ-এর অবস্থান জঙ্গলে ঘেরা তিন পাহাড়ের পায়ের কাছে। তিস্তাবাজার ছাড়িয়ে একটি ঝোরার উপর কাঠের সেতু পেরিয়ে পথ দু’ভাগ হয়েছে। ডান দিকের মাটি পাথরের পথে একটু এগোলেই পাওয়া যাবে পিচের ছোঁয়া। তিস্তার পাড় ধেরে সেগুনের ছায়া ঘেরা এই পথ শেষ হয়েছে তিস্তা রঙ্গিতের সঙ্গমে। পৌষ সংক্রান্তির সকালে রঙ বেরঙের পোশাকে সজ্জিত পাহাড়িয়ায় ভরে ওঠে বিজন প্রান্তর। প্রকৃতি আর মানুষে মিলে তৈরি হয় বর্ণময় ক্যানভাস। চলে তিস্তা মাঈ-এর পুজো। পুজো-অর্চনার সঙ্গে চলে মেলামেশা, বেড়ানো, নৌকা চড়া, খাওয়াদাওয়া, কেনাকাটা এবং অবশ্যই নাগরদোলা।
দার্জিলিং , কালিম্পং এমনকী সিকিমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসে বাসে, গাড়িতে। আশেপাশের মানুষেরা আসে পায়ে হেঁটে। দোকানিরা আসেন মূলত সমতলের শিলিগুড়ি, ময়নাগুড়ি, মালবাজার থেকে তাঁদের রকমারি পণ্যের সম্ভার নিয়ে। আগে বেনিতেই মেলা বসত চার দিনের। এখন তা ত্রিস্রোতা তিস্তার মতোই তিন ভাগ হয়ে গিয়েছে। মেলার মূল কেন্দ্র বেনি থেকে সরে এসেছে তিস্তাবাজারে। বেনির মেলা এখন এক বেলার। বাকি দু’টি অংশ তিস্তাবাজারের মধ্যেই। চরিত্র আর পাঁচটা গ্রামীণ মেলার মতোই।
তবে বেনির মেলার অতীত গৌরব আর নেই। আগে সারা রাত জুড়ে এখানে বসত সিনেমা-যাত্রা-সার্কাসের আসর। এখন আর সে সব হয়না। তবে মেলা চলে দশ দিন ধরে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020