পুরুলিয়া জেলার ৫৬ বছর বয়স্ক শিক্ষক গরুপদ মাজী তাঁর অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘এমন একটা সময় ছিল যখন গ্রামের ঐ বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীরা আসতে চাইত না। পরবর্তী সময়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ করার ফলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে পরিকাঠামো থেকে সমস্ত কিছু পরিবর্তন হয়েছে। বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠানোর বিষয়ে মানুষ সচেতন হয়েছেন ...।’ গুরুপদ মাজীর এই কথা শুধু পুরুলিয়া জেলার জন্য সত্য নয়, এটা পশ্চিমবাংলার যে কোনও জেলার জন্যই সত্য। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি সমীক্ষা এবং শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার লিখন — সব কিছুই দেখায় যে পশ্চিমবাংলায় প্রাথমিক স্তরে শিশু শিক্ষায় বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি ঘটেছে, যার মধ্যে শিশু ভর্তি অন্যতম। এ রাজ্যে গঠিত প্রথম শিক্ষা কমিশন (অশোক মিত্র কমিশন)-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৭৯ – ৮০ সালে পশ্চিমবাংলায় প্রাথমিক স্তরে মোট শিশু ভর্তির হার (জি ই আর; জি ই আর-এ ভর্তি হওয়া মোট শিশুদের (বয়স নিরপেক্ষ ) সংখ্যার ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। কিন্তু এন ই আর-এ সেই বছরে ভর্তিযোগ্য শিশুদের সংখ্যার বিপরীতে প্রকৃত ভর্তির হিসাবটা ধরা হয়। যেমন, কোনও এক বছরে বুনিয়াদি স্তরে (প্রথম – অষ্টম শ্রেণিতে) ভর্তিযোগ্য (৬ – ১৪ বছর বয়সী) শিশুর সংখ্যা ১০০, কিন্তু সেই বয়সি শিশুদের প্রকৃত ভর্তি হওয়ার সংখ্যা ৯০ এবং মোট ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ১০৫ । এ ক্ষেত্রে, জি ই আর হবে (১০৫ / ১০০ X ১০০) = ১০৫ এবং এন ই আর হবে (৯০ X ১০০ X ১০০) = ৯০) ছিল ৮৭. ৪ শতাংশ। কিন্তু ডাইস (ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম অফ এডুকেশন)-এর তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবাংলায় ২০০৮ – ০৯ এ মোট শিশুর ভর্তির হার (জি ই আর, রিপোর্ট অফ দি এডুকেশন কমিশন, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল, ১৯৯২) ছিল ১২১.২ শতাংশ। ঐ একই সূত্র অনুযায়ী ঐ সময়ে পশ্চিম বাংলায় প্রকৃত শিশু ভর্তির হার (এন ই আর) ছিল ৯৯.১ শতাংশ (অ্যানুয়াল রিপোর্ট ২০০৮ – ০৯, ডিপার্টমেন্ট অফ স্কুল এডুকেশন, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল কলকাতা)। প্রতীচী ট্রাস্টের ২০০৮ – ০৯ এর সমীক্ষায় ৫ – ১৪ বছর বয়সি ১০৮৮ জন শিশুর মধ্যে মাত্র ৩ জন (০.৩ শতাংশ) শিশু কখনওই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি। শিক্ষকদের লিখিত অভিজ্ঞতাগুলিও বলছে যে শিশুর ভর্তির প্রশ্নে পশ্চিমবাংলায় প্রায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি সাফল্য অর্জন করা গেছে। দু’ একজন শিক্ষক অবশ্য বলছেন যে শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে না, এমনটা আজও হচ্ছে। কিন্তু সব মিলিয়ে শিশুভর্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবাংলায় সত্যিই বিরাট সাফল্য অর্জন করা গেছে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/30/2020