মালদা জেলার পাকুয়াহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুশান্ত সরকার লিখেছেন :
‘ এই বিদ্যালয়ে আসার পর লক্ষ করেছি কিছু ছেলেমেয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না… যারা নিয়মিত আসে না তাদের চিহ্নিত করে সেই সব শিশুর অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে একটি অদ্ভুত জিনিস জানতে পারলাম। যে হেতু আমার স্কুল সারা বছর সকালে অনুষ্ঠিত হয় ... সেই কারণে কিছু অভিভাবক আমার বিদ্যালয়েও শিশুটিকে ভর্তি করেছেন আবার আমার পাশের একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেটি দুপুর ১১টায় শুরু হয়, সেখানেও। ঐ সমস্ত শিশু সপ্তাহে ৩/৪ দিন আসে, বাকি দিন অন্য বিদ্যালয়ে যায়। আমি বিষয়টি জানার সমস্ত অভিভাবকের ডেকে নিয়ে তাদেরকে বোঝালাম যে এটা আপনার শিশুর পক্ষেই ক্ষতিকারক হচ্ছে। ঐ শিশুগুলি কোনও বিদ্যালয়ে সঠিক ভাবে পঠন-পাঠন করতে পারছে না… ওনাদের বুঝিয়ে পরবর্তী বৎসরগুলিতে অন্য বিদ্যালয়গুলি থেকে নাম কাটানোর ব্যবস্থা করার পর লং অ্যাবসেন্টি-র পরিমাণ কমেছে।’
লেখাটি থেকে যেমন একটা সমস্যার কথা উঠে এসেছে, তেমনি কিন্তু এ সম্পর্কিত এমন একটি অভিজ্ঞতালব্ধ সমাধান উঠে এল — অভিভাবকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন --- যা প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুভর্তির প্রশ্নে প্রায় শতকরা ১০০ ভাগ এই সাফল্যের পিছনের মূল কারণগুলি কী? শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, শিক্ষকদের উদ্যোগ এই সাফল্যের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। মালদা জেলার এন জি হাতিডুবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অবিনাশ বিশ্বাস লিখেছেন যে তিনি যখন ঐ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন (২০০১ সালে) তখন শিশুর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭ জন। কিন্তু তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাঁর যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৬০ জন শিশু ভর্তি হয়েছিল। তাঁর কথায় :
‘ ছাত্র হাজিরা খাতা অনুযায়ী শিশুর সংখ্যা তখন ৪৭ জন, গড় হাজিরা ১৩ জন। তিনটি ছোট ছোট গ্রামের শিশুরা ঐ বিদ্যালয়ে আসে। গ্রাম তিনটি ঘুরে নানা তথ্য সংগ্রহ করলাম। বিভিন্ন ভাবে গ্রামবাসীকে বিদ্যালয় ও শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে কিছুটা সফল হলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণিতে শিশু ভর্তি হল ৬০ জন। মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭১ জন। উল্লেখ থাকে যে, একটি বাড়িতে একই মায়ের ৮টি সন্তান পেলাম, যারা কেউ আগে বিদ্যালয়ে যায়নি।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/22/2020