দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যের প্রশ্নে শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে যে ত্রুটি রয়েছে তার পিছনে এক দিকে সরকারি নীতি ও দুর্বলতার যেমন ভূমিকা আছে, তেমনই অন্য দিকে সমাজে গেড়ে বসে থাকা কিছু ধ্যানধারণারও বড় ভূমিকা আছে। পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা কী ভাবে শিক্ষকদের নিজ দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী করে তুলতে পারে তা আলোচিত হয়েছে। পশ্চিমবাংলার আজকের জটিল সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষের সাথে শিক্ষকদের সম্পর্কের অবনতিও শিক্ষকদের নিজ দায়িত্ব পালনে অনুৎসাহী করে তোলার কারণ হতে পারে, তাও আলোচনায় পরিষ্কার। কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে চালু থাকা কিছু বদ্ধমূল ধারণাও যে এই দায়সারা মনোভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। আমরা দেখেছি যে আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছনের সারির ঘর থেকে আসা শিশুদের কোনও রকম বর্ণপরিচিতি ছাড়াই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াকে শিক্ষকেরা একটি গুরুতর সমস্যা হিসাবে দেখেছেন। এর সমাধান হিসাবে শিক্ষকদের মধ্য থেকে বেশ জোরালো একটা দাবি উঠেছে। সেই দাবি হল, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার আগেই শিশুদের বর্ণের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে হবে, তাই প্রাথমিকে চালু করতে হবে শিশু শ্রেণি। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী বর্ণপরিচয় দিয়েই কিন্তু প্রথম শ্রেণির শিক্ষা শুরু হবে। সুতরাং শিক্ষকদের মধ্যেকার কিছু ধারণা ও সরকারি নীতির মধ্যে যে ফারাক থাকছে তা নিশ্চিত ভাবেই শিক্ষকদের উদ্যোগকে প্রভাবিত করবে। বিভিন্ন প্রাইভেট স্কুলে প্রাক প্রাথমিক শিশু শ্রেণি চালু রয়েছে। প্রাইভেট স্কুলের এই ধাঁচটিই শিক্ষকদের প্রাথমিকে শিশু শ্রেণি চালু করার ধারণাতে ইন্ধন দিতে সাহায্য করে। যাই হোক না কেন, এবং সমস্যার মূলে যতই কেননা বাস্তব কারণ থেকে থাক, আমরা বিজ্ঞানের বিপরীতে যেতে পারি না। প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে বিজ্ঞানের পক্ষে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটি অবশ্যই কিছু শিক্ষক নিয়েছেন, এবং তাঁদের কাছ থেকেই আমরা জানতে পারছি, বর্ণপরিচয়ের কাজটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই হওয়া সম্ভব।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/26/2020