নগর পরিকল্পনায় এর আগেই বাজিমাত করেছে আইআইটি খড়গপুরের পড়ুয়ারা। কলেজ স্ট্রিটকে কী ভাবে আধুনিক ‘রিডিং হাব’-এ পরিণত করা যায় সেই প্রজেক্ট দেশের মধ্যে সেরার সেরা শিরোপা আদায় করে নিয়েছে। আর এ বার শহরের পরিবেশ বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ হাতে নিল কেন্দ্রীয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ‘মিশন গ্রিন প্রজেক্ট ’ নামের এই উদ্যোগটি আপাতত আইআইটি ক্যাম্পাসের অন্দরে রূপায়ণ করা হবে, পরবর্তী ধাপে রাজ্যের বড় পুরসভাগুলির সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি নিয়ে এই উদ্যোগকে ক্যাম্পাসের বাইরেও ছড়িয়ে দিতে চাইছেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। সুতরাং আবর্জনা পরিষ্কার থেকে জলের অপচয় রুখতে আর ক-দিন বাদে এই পড়ুয়াদের আবিষ্কারই নয়া পথের সন্ধান দিতে পারে নাগরিক জীবনে --- এমন আশাই করছেন প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী।
প্রতিষ্ঠানের ভিশন ২০ -২০ প্রোগ্রামের আওতাধীন ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ গ্রান্টের অন্দরে এই মিশন গ্রিন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে আইআইটি। ডিরেক্টর জানাচ্ছেন এই গ্রিন প্রজেক্টের বাস্তবায়নের জন্য ধাপে ধাপে মোট ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কী ভাবে কাজ হবে ? গ্রিন প্রজেক্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোঅর্ডিনেটর অধ্যাপক অনির্বাণ ধর জানাচ্ছেন, তিনটি ধাপে কাজটিকে ভাগ করে নিয়েছেন তাঁরা। প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের থেকে। সেই প্রস্তাবগুলির থেকে সেরা প্রজেক্টগুলিকে বেছে নিয়ে দ্বিতীয় ধাপে তা রূপায়ণের যাবতীয় কাজকর্ম শুরু করবেন আগ্রহী পড়ুয়ারা। প্রত্যেকটি কাজের সঙ্গে এক জন অধ্যাপককে জুড়ে দেওয়া হবে। যাতে শিক্ষানবিশদের কাজে ছায়া পড়ে অভিজ্ঞতার।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গিয়েছে, প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার, বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সৌরশক্তি চালিত যন্ত্র তৈরি, জলের ব্যবহার কমানো, ইলেকট্রনিক গারবেজের পুনর্ব্যবহারের মতো একাধিক বিষয়ে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল পড়ুয়াদের থেকে। অনির্বাণবাবুর কথায়, ‘এই ধরনের ক্যাটেগরিতে অজস্র প্রস্তাব আমরা পেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত যে প্রজেক্টগুলি বেছে নিয়েছি সেগুলি রূপায়ণ করা সম্ভব হলে ক্যাম্পাসই নয়, নাগরিক জীবনেও এর উপকারিতা দেখা যাবে।’ জৈব বর্জ্য থেকে পোর্টেবল ইলেকট্রিক জেনারেটর তৈরি, বিদ্যুতের কারচুপি মেটাতে ইলেকট্রিক মিটারের জন্য বিশেষ ধরনের স্মার্ট কার্ড তৈরি, ফেলে দেওয়া শাক-সবজি এবং শস্য দানাকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাড়ির ছাদেই ফলন করানোর মতো একাধিক অভিনব প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন পড়ুয়ারা। ইতিমধ্যেই খড়গপুর পুরসভার সঙ্গে কথা বলে এই সব প্রজেক্টকে ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আইআইটির পড়ুয়ারাই খড়গপুর পুরসভা এলাকায় পুরকর্মীদের সঙ্গে হাতেকলমে কাজেও নামবেন বলে ঠিক হয়েছে। কেন এমন কাজে হাত দিল আইআইটি ? প্রতিষ্ঠানের ব্যাখ্যা, এই ধরনের উদ্যোগ আচমকা নেওয়া হয়নি। ২১০০ একরের ক্যাম্পাসে এর আগেই পেট্রোল চালিত যান ব্যবহারে রাশ টানা হয়েছে। জ্বালানি সমস্যার কথা মাথায় রেখে পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসের অন্দরে ওই সব যান ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। ক্যাম্পাসের অন্দরে সবুজায়নের জন্যও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে পরিবেশ রক্ষায় এই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের যে লক্ষ্য তা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই এমন পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানাচ্ছে আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টরের দপ্তর। তবে এই প্রজেক্টে রূপায়ণের জন্য সর্বাধিক তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে কাজে গতি আসবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
অতএব প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বাড়িতে চাষ আবাদ করার সুযোগ তিন বছর পরই পেতে পারে আম-আদমি।
সূত্র: জয় সাহা, এই সময়, ১৬ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020