হাত দিয়ে সে লিখতে পারে না। পা দিয়ে পারে না হাঁটতে। কিন্তু মহম্মদ জাফরুদ্দিন মুখ দিয়ে লিখতে শিখেছে। ৩১ বছর বয়সী জাফরুদ্দিন নারকেলডাঙার হানিফা প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি নিজের উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এমন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শালিনী (মিমি) রক্ষিত মেমোরিয়াল স্কলারশিপটা সে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। ছেড়ে দিয়েছে শিল্পী কর্মকারের জন্য। শিল্পী, গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস কলেজের পদার্থবিদ্যার ছাত্রী। সে উচ্চ মাধ্যমিকে ৮১.৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। আর সেটা পাওয়ার জন্য তাকে তার বাঁকুড়ার বাড়ি থেকে রোজ ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ৩ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে টিউশন পড়তে যেতে হত। যাওয়া আসার পথে মাঝে মধ্যে হাতিদেরও মুখোমুখি হত শিল্পী।
জালালুদ্দিন গাজি (ডান দিকে) ক্লাস টু-এর বেশি পড়তে পারেননি। কারণটা সহজ, তার অভিভাবকদের ওর চেয়ে বেশি পড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। পড়াশোনার বদলে তিনি কলকাতার এন্টালির রাস্তায় ভিক্ষা করতেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি রিকশা চালক হয়ে যান, কিন্তু পড়াশোনার ইচ্ছাটা তখনও তার মাথা থেকে যায়নি। কুড়ি পেরোতেই তিনি ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন এবং নিজের উপার্জন থেকে যে সব শিশুর বই কেনার ক্ষমতা নেই, তাদের বই কিনে দেন। তার কিছু আরোহীর কাছ থেকেও তিনি অনুদান নিতেন। এখন জালালুদ্দিন তার গ্রামে, সুন্দরবনের ঠাকুরচকে, দু-দুটো স্কুল চালান। একটি অনাথ আশ্রমও তৈরির কাজ চলছে। “ আমি চাই না, যে সব শিশুর ক্ষমতা নেই, তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকুক এবং আমার মতো রাস্তায় ভিক্ষা করুক”, সত্যজিত দলুই-এর হাতে ড. কৃষ্ণ গোপাল উদ্ভেগম স্কলারশিপ তুলে দেওয়ার আগে এ কথা শোনা গেল জালালের মুখে। ক্যানিং-এর গোপালপুরের সত্যজিৎ ধান ক্ষেতে কাজ করেও ২০১৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম ডিভিশন পেয়ে পাস করেছে।
দুটি ঘটনাই আমাদের অনুপ্রাণিত করে, হতাশায় যারা আক্রান্ত তাদের নতুন স্বপ্ন দেখায়। উন্নততর জীবনের পথ নিদের্শ করে।
সূত্র: টেলিগ্রাফ, কলকাতা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/5/2022