পড়ুয়ারা যাতে নিজে নিজে শিখতে পারে, তার উপযুক্ত করে বিকাশপিডিয়ার শিক্ষা ক্ষেত্রটিকে গড়ে তুলতে হবে। কী ভাবে বিকাশপিডিয়ার শিক্ষা ক্ষেত্রটিকে আরও সমৃদ্ধ করা যায়, সে বিষয়ে এক আলোচনাসভায় শিক্ষা-বিশেষজ্ঞরা যে মত প্রকাশ করেন, তার মূল সুর ছিল এটাই।
গত ৩০ ডিসেম্বর আয়োজিত ওই আলোচনাসভায় যোগ দেন বিকাশপিডিয়ার শিক্ষা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর সদস্যরা। এঁদের মধ্যে ছিলেন বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর প্রধান প্রাক্তন উপাচার্য মণিমালা দাস, টিচার্স ফোরামের পক্ষে শিখা সরকার, শ্যামলী লাহা ও টুলটুল দাশগুপ্ত, লরেটো স্কুলের মার্গারেট কিং, পাঠভবন স্কুলের ইন্দিরা ঘোষ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথা মুখোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অমিতা চ্যাটার্জি ও নন্দিনী মুখার্জি, মৌলানা আজাদ কলেজের দেবপ্রসাদ ব্যানার্জি, আইআইইএসটি-র সুশান্ত চক্রবর্তী, শিক্ষাকর্মী শুভেন্দ্র মৌলিক এবং অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ। এ ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন বিকাশপিডিয়ার মেন্টর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, বাংলা বিকাশপিডিয়ার স্টেট নোডাল এজেন্সি আইআইআইএম-এর অধিকর্তা ও টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অশোক ঠাকুর এবং সদস্য-সচিব সৌম্যব্রত দাস।
বৈঠকের শুরুতে অধ্যাপক অশোক ঠাকুর ও সদস্য সচিব সৌম্যব্রত দাস বিকাশপিডিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং উপস্থিত শিক্ষাবিদরা এই পোর্টালে কী অবদান রাখতে পারেন এবং কী ভাবে একে সমৃদ্ধ করতে পারেন, সে বিষয়ে নিজেদের মতামত জানান এবং একই সঙ্গে এই পোর্টালকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রস্তাব আহ্বান করেন।
বিকাশপিডিয়ার শিক্ষা ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কী কী হয়েছে, তা সংক্ষেপে জানান প্রাক্তন উপাচার্য মণিমালা দাস। তাঁর মতে এই পোর্টালের ‘পেশা নির্দেশ’ বিভাগটিকে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারলে তা বেশির ভাগ পড়ুয়ার কাজে লাগবে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোথায় কোথায় আইটিআই আছে, সেখানে কী কী পড়ানো হয়, পড়লে কাজের সুযোগ কী আছে, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ কোথায় কোথায় বাড়ছে, নার্সিং শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষার সুযোগ কোথায় কোথায় বাড়ছে, তা বিকাশপিডিয়ায় থাকা দরকার।
শ্যামলী লাহা ও টুলটুল দাশগুপ্ত বলেন, স্কুল স্তরের পড়ুয়াদের পেশা নির্দেশ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা পাঠক্রমে নেই। আরও একটি বিষয়ের প্রতি তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বলেন, যারা ভিন্ন ভাবে সক্ষম, তেমন পড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন পেশা থাকলেও, সেগুলো সম্পর্কে জ্ঞানভাণ্ডার নেই। বিকাশপিডিয়া এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিকাশপিডিয়ার পাঠক কারা, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবনা ও সেই মতো দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পোর্টালের শিক্ষা ক্ষেত্রটিকে গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে করেন অমিতা চ্যাটার্জি। পড়ুয়ারা যাতে ভাবতে এবং নির্ভুল লিখতে শেখে, সে বিষয়ে বিকাশপিডিয়া কী ভাবে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের পরামর্শ দিতে পারে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি, তাঁর মনে হয়, পড়ুয়াদের মধ্যে উন্নত মূল্যবোধ যাতে গড়ে ওঠে, সে বিষয়েও বিকাশপিডিয়ার ভূমিকা থাকা দরকার।
রতন খাসনবিশ বলেন, স্বচ্ছল পরিবারের পড়ুয়ারা নানা সুযোগ এমনিতেই পেয়ে থাকে। যাতে পরিষেবা-বঞ্চিতদের উপযোগী তথ্য বিকাশপিডিয়ায় থাকে, সে দিকে লক্ষ রাখা দরকার। তা করতে গেলে প্রকাশিত তথ্যে শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। সেই মতো শিক্ষকদেরও সাহায্য করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সব উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি হয়েছে, সেগুলি এই পোর্টালে সন্নিবেশিত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ সম্পর্কে এই পোর্টালে তথ্য থাকা দরকার।
কারিগরি শিক্ষা এবং জীবিকার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্যকে পোর্টালে প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করেন শুভেন্দ্র মৌলিক। তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়ে তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ থাকলেও সচেতনতার অভাবে এই ধরনের পাঠক্রমগুলিতে পড়ুয়া পাওয়া যাচ্ছে না। শুভেন্দ্রবাবুর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি ছিল মার্গারেট কিং-এর কথাতেও। পাশাপাশি তিনি ডন বস্কো স্কুলে এই ধরনের একটি পাঠক্রমের সাফল্যের কথা বৈঠকে জানান।
স্কুল স্তরের পাঠক্রম যাঁরা তৈরি করেন, তাঁদের বিকাশপিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেন দেবপ্রসাদ ব্যানার্জি।
নানা কারণে শ্রেণি কক্ষের শিক্ষায় যারা অংশ গ্রহণ করতে পারছে না, তাদের কথা মাথায় রেখে ই-লার্নিং-এর ক্ষেত্রে বিকাশপিডিয়ার ভূমিকা থাকা উচিত বলে মনে করেন নন্দিনী মুখার্জি। তিনি বলেন, শুধু তথ্য দিলেই হবে না, এই গতিশীল দুনিয়ায় জ্ঞানও প্রতি মুহূর্তে বিকশিত হচ্ছে, বিকাশপিডিয়াকে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
সুশান্ত চক্রবর্তী মনে করেন, চিরাচরিত ও অচিরাচরিত দুই ধরনের শিক্ষাতেই কী ভাবে বিকাশপিডিয়া ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে ভাবা দরকার। খুব স্থানীয় স্তরে কাঁচা মাল দিয়ে স্থানীয় স্তরের জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বাড়ানো এবং সেগুলিকে উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে পোর্টালে প্রকাশ করাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন সুশান্তবাবু। ইন্দিরা ঘোষ বলেন, পোর্টালে এমন ভাবে তথ্য দেওয়া উচিত, যাতে পড়ুয়াদের ওপর পড়াশোনা চাপিয়ে না দেওয়া হয়, যেন সে পড়াশোনাকে ভালোবাসতে শেখে। আনন্দমোহন পাল মনে করেন, শিল্প ক্ষেত্র, বিভিন্ন স্কুল, অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন, গ্রন্থাগার যাতে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এই পোর্টালে যুক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত।
শিখা সরকারের বক্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যে সব শিক্ষক জড়িত, তাঁরা নিজেরা না চাইলেও পরিস্থিতির চাপে পড়ুয়াদের মুখস্থবিদ্যায় অভ্যস্ত করাতে বাধ্য হন। বিকাশপিডিয়া যদি পড়ুয়াদের নিজে নিজে শিখতে উৎসাহিত করতে পারে, তা হলে সেটা একটা জরুরি কাজ হবে। পড়ুয়াদের যথার্থ শিক্ষার জন্য অভিভাবকদের কাউন্সেলিং যে খুব জরুরি, সে কথা মনে করিয়ে দেন পৃথা মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, এই পোর্টালে সেই সংক্রান্ত বিষয়বস্তু থাকা দরকার।
বৈঠকের শেষে সারসংকলন করতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, পড়ুয়ারা যাতে নিজে নিজে শিখতে পারে, তার উপযুক্ত করে এই পোর্টালের শিক্ষা ক্ষেত্রটিকে গড়ে তোলার পক্ষেই উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তিনি এবং প্রফেসর অশোক ঠাকুর দু’জনেই, উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের, তাদের মতামত লিখিত ভাবে জমা দিতে অনুরোধ করেন।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/9/2020