সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন না ব্যস্ত বাবা-মায়েরা। তাঁদের কাছে পাওয়ার অভাব থেকেই কি কোনও কল্পজগৎ গড়ে নিচ্ছে শিশু-কিশোরেরা ? আর মর্মান্তিক মৃত্যুতেও তার মাসুল দিতে হচ্ছে ? টিভিতে ডব্লিউডব্লিউএফের কুস্তি দেখে নকল করতে যাওয়া সল্টলেকের কিশোর অগ্নিবেশ দত্তর করুণ পরিণতির পর এ সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। আধুনিক পরিবারে নিজের ‘বাধ্য’ সন্তানটি সম্পর্কে বাবা-মায়েরা অনেক সময়ই বলে থাকেন, ‘ও তো সব সময় নিজের মতো থাকতেই ভালোবাসে। একদম বাড়ির লোকজনকে জ্বালাতন করে না।’ কিন্তু সেই শিশুটি নিজের মতো থাকতে থাকতে পড়াশোনা বাদে আর কী কী করে, তা নিয়ে বেশির ভাগ সময়ই খুব একটা ওয়াকিবহাল থাকেন না তাঁরা। এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্কুলে নিয়মিত কাউন্সেলিং ক্লাস বা অভিভাবকদের ডেকে কাউন্সেলিং করানো হলেও বাড়িতে নজরদারির খামতি থেকে যাচ্ছে। আবার অনেক সময় ছোটবেলাতেই মা বা পরিচারিকারা বাচ্চাকে টিভি দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। যার ফলে শিশুবয়স থেকেই টিভির নেশাটা বাড়তে থাকে। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ডিরেক্টর কৃষ্ণা দামানি বলছেন, ‘এটা একটা জীবনবোধের বিষয়। বাচ্চাকে তুমি টিভি দেখো না, এটা না বলে ওদের জীবনবোধটাকে একটু অন্য রকম করে শেখাতে হবে। তা হলেই এই দুর্ঘটনাগুলো অন্তত এড়ানো যাবে।’ সেন্ট জেমস স্কুলের সহ-অধ্যক্ষ এসকে মুন্ডুলের কথায়, ‘বাচ্চা তো স্কুলে টিভি দেখে না। বাড়িতে গিয়ে দেখে। বিশেষত লম্বা ছুটির সময়গুলোতে এই টিভি দেখাটা বাড়ে।’ তাঁর মতে, বাবা-মায়ের উচিত সন্তান ঠিক কী দেখছে, তা জেনে নিজেদের মধ্যে একটা বিশ্লেষণ চালানো। সেই অনুযায়ী বাচ্চাকে ডব্লিউডব্লিউএফের মতো শো দেখা থেকে আটকানো। না হলে শুধু স্কুলের তরফে সচেতনতা চালিয়ে কিছু হবে না। মনোবিদ উদিতা বড়াল জানাচ্ছেন, ‘কিশোর বয়সে প্রয়োজনটা অন্য রকম হয়। তাই একটা যত্ন দরকার। তবে টিভিতে সন্তান কী দেখবে, কোন শো দেখবে, এটাও বোঝানো দরকার। প্রয়োজনে বাবা-মায়েরা বাচ্চার সঙ্গে বসেই টিভি শোগুলো দেখতে পারেন। নজরদারির আদলটাও একটু বদলানো দরকার। কারণ, যে ঘটনাটা ঘটেছে তাতে বোঝা যায় যে, ওই কিশোরের নিজেকে প্রমাণ করার একটা উদ্দেশ্য ছিল। স্টান্ট জাতীয় কোনও শো যদি ও মা-বাবার সঙ্গে বসে দেখত, তা হলে তাঁরা তার বিরোধিতা না করে বোঝাতে পারতেন যে, এটা করতে গেলে অন্য রকমের প্রশিক্ষণ এবং পরিকাঠামো প্রয়োজন, যা ওর নেই।’ শুক্রবার দত্ত পরিবারের কাছে শোক জানিয়েছে ডব্লিউডব্লিউএফ। তবে তারা বলেছে, এই ঘটনার জন্য তাঁরা যেন ওই শো-কে দায়ী না করেন। কারণ, তাদের শো’য়ে কখনওই দড়ি গলায় বেঁধে কোনও খেলা দেখানো হয় না। তবে অনুষ্ঠান শুরুর আগে কোনও সতর্কতা দেখানো হয় কি না, এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে শো’য়ের মুখপাত্র কোনও উত্তর দেননি।
সূত্র : এই সময়, ১৪ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020