পঞ্চকর্ম চিকিৎসার জন্য বাঙালির কেরল বা কর্নাটক দৌড়নোর ঝক্কি শেষ হতে চলেছে। কারণ, কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে এ বার স্নাতক স্তরে পঞ্চকর্মের শিক্ষাক্রম শুরু হতে চলেছে। প্রাথমিক ভাবে এই বিভাগের জন্য এক জন লেকচারার ও এক জন রিডারের অনুমোদনও দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। এত দিন পর্যন্ত রাজ্যে সরকারি আয়ুর্বেদ শিক্ষায় ‘কায়াচিকিৎসা’র সিলেবাসের অংশ হিসেবেই ছিল পঞ্চকর্ম। তা এ বার স্বাতন্ত্র পেতে চলেছে। যা রাজ্যে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পক্ষে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবেই দাবি করছেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা।
এই দাবির কারণও আছে। কারণ বাত বা স্পন্ডিলোসিস, মায় পক্ষাঘাতের চিকিৎসার তাগিদে এত দিন সাধারণ ভাবে গন্তব্য ছিল কেরল-কর্নাটকের মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলো। এই ধরনের আয়ুর্বেদ চিকিৎসার টানে বিদেশ থেকেও মানুষ আসেন ওই রাজ্যগুলিতে। এক কথায়, ভারতীয় সনাতন চিকিৎসা সংক্রান্ত হেল্থ টুরিজমের বিকল্প গন্তব্য হিসেবে এ বার যাতে বাংলা তার পালে দখিনা বাতাস কেড়ে নিতে পারে, প্রশাসনের পরিকল্পনা তেমনই।
ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কথা, ‘কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চকর্ম সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা আছে। যেমন, এখানে কোথাও কোথাও ম্যাসাজ বা স্টিম বাথ দিয়ে রোগীর ব্যথা-যন্ত্রণার খানিক উপশম করাটাই পঞ্চকর্মের সমার্থক। অথচ পঞ্চকর্ম চিকিৎসার মৌলিকতা হল শরীরকে দূষণমুক্ত করা। নিত্য দিনের অনিয়মিত ও ভোগবাদী জীবনযাপনে শরীরে যে দূষণ জমে, শিরোধারা, নাস্য, কটি বস্তি, স্নেহনকর্ম ও বমনকর্মের মাধ্যমে তা সাফ করাই পঞ্চকর্মের উদ্দেশ্য। ফলে, পঞ্চকর্মের নামে চালাকির দ্বারা মহৎ কর্ম সম্পন্ন করা অনুচিত।’
প্রাথমিক ভাবে, তিন জন ছাত্র দিয়ে নয়া বিভাগে পঞ্চকর্মের পাঠ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। পরে রাজ্য সরকার এক জন অধ্যাপকের পদ অনুমোদন করলে ছাত্র সংখ্যা আরও বাড়বে। সর্দিকাশি, শরীরে নানা ধরনের যন্ত্রণা, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে ক্রমাগত জল পড়া, পক্ষাঘাত, স্নায়ুরোগ, বদ হজম বা চর্মরোগের মতো অসুখে পঞ্চকর্ম খুবই কাজ দেয় বলে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি।
পাশাপাশি, ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সূত্রে খবর, আরও একটি নয়া স্নাতকোত্তর বিভাগও এখানে চালু হতে চলেছে। তা হল, অ্যানাটমি বা শারীরবিদ্যা।
সূত্র: এই সময়, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020