অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

কারা পরিচালনা পদ্ধতি

মুখবন্ধ

সংশোধনাগারে ক’জন বন্দি আছেন, তাদের কবে আনা হয়েছে, কবেই বা তাদের ছুটি কিংবা শ্রম দিয়ে তারা কত টাকা রোজগার করলেন? এ সবের হিসাব রাখা হয় খাতায় কলমে। ফলে গণ্ডগোল, গরমিল, অস্বচ্ছতা সহ প্রায়শই নানা অভিযোগ ওঠে জেল কতৃর্পক্ষের বিরুদ্ধে। এই সমস্যা দূর করতে এবং সংশোধনাগারের কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতে গোয়া সরকার চালু করেছে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর কারা পরিচালনা পদ্ধতি সংক্ষেপে যার নাম প্রিজম।

এই প্রিজম ব্যবস্থা চালু করার আগে সংশোধনাগারের কাজকর্মের গোটা প্রক্রিয়াটাই ছিল যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। খাতার পর খাতা উল্টে তথ্য বার করতে হত। ফলে নানা সময়ে অভিযোগ উঠত প্রশাসনিক অদক্ষতার। নয়া এই ব্যবস্থায় সে সব ঝক্কি নেই। মাউসের এক ক্লিকে বা টাচ স্ক্রিন ছুঁয়ে গন্তব্য তথ্য ভাণ্ডারে পৌঁছে যাওয়া যায়। তা ছাড়া ওই সব খাতার রক্ষণাবেক্ষণে যে পরিমাণ খরচ হত তার ভার অনেকটা লাঘব করেছে নয়া এই ব্যবস্থা। প্রিজমের মাধ্যমে প্রশাসনের ঝক্কি অনেকটা কমেছে। সংশোধনাগারের কাজকর্মে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে।

তবে নয়া এই ব্যবস্থা চালু করার পথ গোড়াতে যে খুব মসৃণ ছিল তা বলা যায় না। প্রথম দিকে আগ্রহ দেখাননি কারাকর্মীরা। অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরিতে সমস্যা হয়েছে। নতুন এই পদ্ধতির নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বন্দিরাও প্রথম দিকে এই প্রিজম ব্যবস্থাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। ফলে তাদের দিক থেকেও সে ভাবে আগ্রহের দেখা মেলেনি। এই রকম বেশ কিছু বাধা এবং চ্যালেঞ্জের হার্ডেলস টপকে তবে প্রিজমে পথ মৃশণ হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত সফল ভাবে এই প্রিজম পদ্ধতিকে রূপায়ণ করা করতে পেরেছে গোয়া সরকার। তাদের এই সাফল্য অন্য রাজ্যের কাছে উদাহরণ স্বরূপ। সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে একাধিক রাজ্য সংশোধনাগারে এই প্রকল্প চালু করার উৎসাহ দেখিয়েছে।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

প্রকল্পের প্রেক্ষিত

ছোট সংশোধনাগার প্রচুর বন্দি। দেশের অধিকাংশ সংশোধনাগারগুলির ছবিটা এই রকম। গোয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে বন্দি সামলাতে এবং তাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাখতে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা হয় জেল কর্তৃপক্ষের। এর উপর খাতায়-কলমে তথ্য রাখা তো জেল প্রশাসনের কাছে ‘গোদের উপর বিষ ফোড়ার’ মতো। ফলে তথ্য ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তা ছাড়া সংশোধনাগার সংক্রান্ত যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে গোটা প্রক্রিয়াটাই হয়ে দাঁড়ায় একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। জেলবন্দিদের সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে আসেন তাঁদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাখা হয় ম্যানুয়াল ব্যবস্থায়। এই ব্যবস্থায় ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিতকরণ বেশ শক্ত কাজ। দর্শনার্থীর ছবি বা আঙুলের ছাপ নেওয়া হলেও তার কোনও রেকর্ড রাখা হয় না।

অভিযুক্ত ব্যক্তি আগে কোনও দোষে সংশোধনাগারে এসেছিলেন কিনা তা জানা বেশ দুষ্কর। এ ছাড়া বন্দির জামিন, জেলে পুনঃপ্রবেশ, ছুটি মেয়াদ ইত্যাদির হিসাবও রাখা হয় ম্যানুয়াল ব্যবস্থায়। ফলে এই হিসাব রাখা বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। এর পাশাপাশি অন্য দফতরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াটাও বেশ জটিল হয়ে দাঁড়ায়। ২৩টি ক্ষেত্রে সংশোধনাগার এবং বন্দির সংক্রান্ত তথ্য রাখা কারা প্রশাসনের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

জেলবন্দিদের দিক থেকে বিষয়টি দেখলেও পুরনো পদ্ধতির সমস্যাগুলি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। সংশোধনাগারে ঢুকে বন্দিরা প্রতি মুহূর্তে তথ্য নিয়ে সংশয়ে ভোগেন। প্যারোল, ছুটির দিনক্ষণ ইত্যাদির ঠিকঠাক হিসাব হচ্ছে কিনা তা বন্দিদের রীতিমতো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। দেখা গেছে সংশোধানাগারের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বন্দি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তিপ্রাপ্ত। এই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ১৪ বছর হয়। কিন্তু ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংশোধনাগারের হিসাব-নিকাশে যদি গরমিল থেকে যায় তবে মেয়াদে শেষের পরের ওই বন্দি কারাগারের অন্তরালে থেকে যাবেন। এটি চূড়ান্ত অমনাবিক বিষয়। প্রায়শই এমন অভিযোগ জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠে। এর বাইরে মজুরির টাকার ঠিকমতো হিসাব তাঁরা পাচ্ছেন না এমন অশঙ্কায় জেলবন্দিরা ভোগেন।

এই বিষয়গুলি শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতাই নয় মানবাধিকারের সঙ্গে জড়িত। তাই পদ্ধতির ভোলবদল খুব প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

প্রকল্পের বিবরণ

এই প্রকল্প চালু করে সংশোধানাগারের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছে গোয়া সরকার। একটা সময় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সংশোধনাগারের আধুনিকীকরণের রাস্তায় হাঁটতেই চায় না তারা। কিন্তু সেই অভিযোগকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ২০০৮ সালে গোয়া সরকার এই কারা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (প্রিজম) চালু করে। সাফল্য মেলে। তার মাত্রাটা এতটাই যে ই-গর্ভন্যান্স সফল ভাবে রূপায়ণের জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কারও জোটে।

তবে গোয়া সরকারের লক্ষ্য ছিল শুধু জেল প্রশাসনের সংষ্কার নয়, জেলবন্দিদেরও সঠিক পরিষেবা দেওয়া। সে দিকে তাকিয়েই প্রকল্পের সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। এই সফটওয়ার তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে জেল আধিকারিকদেরও যুক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে, গোয়া দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্য যারা রাজ্যের সব জেলকে একটি কেন্দ্রীয় নজরদারি ব্যবস্থার মধ্যে আনতে পেরেছে।সফটওয়্যারটি এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে নেটওয়ার্কে যুক্ত জেলগুলি পরস্পরের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারে।

এই সফটওয়্যারটি জেলবন্দিদের ব্যক্তিগত সম্পতি, ভিজিটরদের কাজকর্ম, বন্দিদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা, প্যারোল, জেল থেকে ছাড়া পাওয়া সংক্রান্ত রিয়েল টাইম তথ্য দেয়।

২০০৮ সালের মে মাসে গোয়া সরকার প্রিজম চালু করে এবং ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যায়। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প জেল প্রশাসনের তিনটে দিককে নিশ্চিত করে।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

প্রিজমের লক্ষ্য

সামগ্রিক প্রিজম ব্যবস্থার লক্ষ্য হল গোয়ার কারা প্রশাসনকে স্বচ্ছ, ব্যবহারকারী-বান্ধব, সমস্যার সমধানমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা।

এ ছাড়া যে লক্ষ্য রেখে প্রিজম কাজ করে তা হল :

  • তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ১০০ শতাংশ কার্যকর কারা পরিচালনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই ব্যবস্থা বন্দির সংশোধনাগারে প্রবেশ থেকে শুরু করে ছাড়া পাওয়া অবধি যাবতীয় প্রশাসনিক কাজকর্মকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। এ ছাড়া কারা বিভাগের প্রশাসনিক কর্মীকে প্রশাসনিক কাজকর্ম আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচলনা করতে সক্ষমতা দান করা এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।
  • প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে বিভাগের কাজকর্মে স্বচ্ছতা আসবে। এই নয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমস্ত তথ্য সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। সুষ্ঠুভাবে বিভাগের মধ্যে সমন্বয় এবং তথ্য ব্যবহারের ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
  • কারা পরিচালন ব্যবস্থার সমস্ত কাজ অনেক নিঁখুত ভাবে করা সম্ভব হবে। ম্যানুয়াল ব্যবস্থার অনেক ভুলভ্রান্তি থেকে যেত, বিশেষ হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে, এ ক্ষেত্রে এই নয়া ব্যবস্থা লক্ষ্য হল তা দূর করা। বিশেষ করে গাণিতিক হিসাব-নিকাশ, যেমন বন্দিদের শাস্তির মেয়াদ এবং তার আয় করা মজুরি, সেই মজুরি থেকে কত অংশ বন্দির নিজস্ব অ্যাকউন্টে জমা পড়বে এবং কত অংশ ক্ষতিপূরণ বাবদ কাটা হবে তার নিখুঁত হিসাব রাখা সম্ভব হবে। কারা বিভাগের দৈনন্দিন কাজের গতিকে মসৃণ ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে এই পদ্ধতি।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

স্টেকহোল্ডার ও পরিষেবা

স্টেকহোল্ডার

এই প্রকল্পের স্টেকহোল্ডার হল রাজ্যের কারা বিভাগ। কালেক্টর এবং সংশোধনাগারের ইনস্পেক্টর জেনারেল এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করেন। গোয়া ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করে। এ ছাড়া প্রকল্পের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে গোয়ার রাজ্য আইটি বিভাগ জেল এবং বিচারবিভাগীয় জেল, পুলিশ বিভাগ এবং বন্দিরাও রয়েছেন।

যে পরিষেবা দেওয়া হয়

  • প্রিজম কেন্দ্রীভূত ত্রিস্তরীয় ডেটাবেস ভিত্তিক ওয়েব ব্যবস্থা, ২৩ কার্যকর মডিউল এবং ২ এমপিবিএস সংযোগ সহ গোয়ার ৬ জেল এবং বিচারবিভাগীয় হাজতে ১০০ শতাংশ বন্দিদের তথ্য রাখার ব্যবস্থা।
  • ৩২ মডিউল ব্যবস্থা বন্দিদের ব্যক্তিগত তথ্য রাখতে সহায়তা করে, যা পরবর্তীকালে কার্যনির্বাহী আধিকারিক এবং করণিকদের সহায়তা করে।
  • প্রিজম যাবতীয় তথ্যের উচ্চমানের নিরাপত্তা দেয়।
  • এই ব্যবস্থায় বন্দি পালালে দ্রুত এসএমস-এর মাধ্যমে তার তথ্য চলে যায় কারা আধিকারিক এবং পুলিশ এমনকী মিডিয়ার কাছেও।
  • প্রিজম ক্ষতিগ্রস্তকেও প্রশাসনিক সহায়তা করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, প্রিজমের মাধ্যমে বন্দির শ্রমে আয় করা মজুরি ৫০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তের ফান্ডে চলে যায়। বাকি আয় আইনি সহায়তা এবং বন্দির ব্যক্তিগত খরচ হিসাবে একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে চলে যায়।
  • প্রিজম আইনি কাঠামোর মধ্যে বন্দির ব্যক্তিগত ভালো থাকা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করে।
  • এই ভালো থাকাকে নিশ্চিত করে বন্দির চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রাখে।
  • এই নতুন পদ্ধতি বন্দিদের কাছে তথ্যের জানলা খুলে দিয়েছে। টাচ স্ক্রিন কিয়স্কের মাধ্যমে বন্দিরা তাঁর জেলে জমা রাখা সম্পদ এবং অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

প্রিজমের ফলাফল

গোয়ার সমগ্র কারা পরিচালন ব্যবস্থার ভোল পাল্টে দিয়েছে প্রিজম। সময়মতো তথ্য সরবরাহ, আদান-প্রদান মসৃণ ভাবে করা সম্ভব হয়েছে। রের্কড এবং রেজিস্ট্রার রাখার ক্ষেত্রে ভুল কমে গিয়ে অনেক বেশি নিখুঁত ভাবে কাজ করা সম্ভব হয়েছে। সহজভাবে কারা প্রশাসনের ২৩ বিভিন্ন ধরনের কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব হয়েছে। এই পদ্ধতি পুলিশ প্রশাসনেরও কাজে এসেছে। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে তাঁরাও কারা বিভাগ থেকে বন্দি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দ্রুত পেয়ে গেছেন। কোনও বাধা ছাড়াই স্বাভাবিক ভাবে ডেটা ফ্লো বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। পাহাড়প্রমাণ ফাইল এবং কাগজের ভার কমানো সম্ভব হয়েছে। এর ফলে কাজে গতি এসেছে, দক্ষতার ছাপ পড়ছে। নির্ভুল হিসাব রাখা সম্ভব হয়েছে।

প্রিজম শুধুমাত্র গোটা ব্যবস্থার কমপিউটারইজেশন নয়, এটি সামগ্রিক ভাবে স্বংক্রিয়করণ এবং বুদ্ধিমান ব্যবস্থার মাধ্যমে কারা প্রশাসনের কাজ পরিচালনা। এই নয়া ব্যবস্থা গোয়া জেল প্রশাসনকে সঠিক অর্থে আধুনিকীকরণের দিকে নিয়ে গেছে। এটি সঠিক সয়মে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। কারা প্রশাসনের সামগ্রিক কাজকর্মে স্বচ্ছতা এনেছে।

প্রিজমে রেকর্ড রাখা অনেক সহজ হয়েছে। ২৩ কারা সংক্রান্ত কাজকর্মে মডিউল তৈরি করা হয়েছে, যার সাহায্যে জেল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হয়েছে।

এই ব্যবস্থা বন্দিদেরও বিভিন্ন তথ্য জানতে সহায়তা করেছে। টাচ স্ক্রিন কিয়স্কের মাধ্যমে তাঁরা জেনে নিতে পেরেছেন তাঁদের আয় এবং সম্পত্তি সহ নানা তথ্য। তা ছাড়া প্রিজম ব্যবস্থা বন্দি সংক্রান্ত তথ্য রাখার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এনেছে। ভুলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। এক কথায় বন্দিদের ক্ষমতায়ানে সাহায্য করেছে প্রিজম।

এই কেস স্টাডি করার সময় সমগ্র ব্যবস্থাটি নিয়ে জেল প্রশাসন এবং বন্দিদের কাছে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়েছিল। জেল প্রশাসন জানিয়েছে, পাহাড়প্রমাণ কাগজের ভার থেকে মুক্ত হওয়ায় কাজে গতি এসেছে। বন্দিরাও এই ব্যবস্থা নিয়ে সদর্থক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অন্য দিকে যাঁরা বন্দিদের আয় করা অর্থ থেকে ক্ষতিপূরণ পান তাঁরাও নয়া ব্যবস্থায় সঠিক সময়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ

প্রিজমকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জের কয়েকটি হল:

  • প্রিজম বাস্তবায়নের কৌশল তৈরি করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কারা প্রশাসন এবং জেলবন্দিদের চাহিদা ভিন্ন। তাঁরা যাতে তাঁদের চাহিদামতো তথ্য পেতে পারেন সে জন্য সমগ্র প্রিজম ব্যবস্থাকে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২৩ বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য ২৩ মডিউল তৈরি করা রীতিমতো জটিল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই মডিউলগুলির মধ্যে ছিল, বন্দি সংক্রান্ত তথ্যের ব্যবস্থাপনা, বিচারাধীন বন্দি চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা, আদালত সংক্রান্ত তথ্য, বন্দিদের কাজের দায়িত্ব এবং নজরদারি, বন্দিদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
  • কী ভাবে তথ্য এবং ডেটা শেয়ার ও আদানপ্রদান করা সম্ভব, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ও দ্রুত সেই তথ্য পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতি তৈরি করাও একটি জটিল বিষয়। এ কাজের প্রশাসনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত এবং নির্ভুল তথ্য আদানপ্রদান করা সম্ভব। এর পাশাপাশি বন্দি এবং কারা সংক্রান্ত তথ্য রাখার জন্য একটি ডেডিকেটেড সার্ভারেরও প্রয়োজন। এর ফলে টাচ স্ক্রিন কিয়স্ককে ব্যবহার করে বন্দিদের প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
  • সিদ্ধান্ত হয়েছিল এক বছরের মধ্যে প্রিজন ব্যবস্থার সব কাজকর্মকে চালু করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পটি চালু হয় ২০০৮ সালের মে মাসে এবং শেষ ২০০৯ সালের ফেব্রয়ারি মাসে। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ২৩ মডিউল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের নজরদারিতে বাস্তবায়ন সদর্থক প্রভাব ফেলেছে।

ভোল বদল

মূল পরিকাঠামোর ধারাবাহিক পরির্বতনের মাধ্যমে কারা পরিচালনা ব্যবস্থার ভোল একেবারে পাল্টে দিয়েছে প্রিজম। এই বদলের লক্ষ্য কারা ব্যবস্থার সংস্কার। পরিকল্পনার মধ্যে ছিল, দক্ষতার ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ব্যবহার এবং বিতরণের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি বিশেষ পরিকাঠামোর, এক্ষেত্রে যার লক্ষ্য ছিল বন্দিরা।

এই ভোল বদলের অন্য একটি দিক হল বন্দিদের কাজের বরাদ্দ এবং পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া। প্রিজম এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করেছে এবং এ জন্য একটি নতুন মডিউল তৈরি করেছে। এটি শ্রম এবং বেতনের শ্রেণি বিভাগ তৈরিতে সহায়তা করেছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিয়ম অনুযায়ী মজুরীর ভাগের করে দেয়। ফাস্ট ট্র্যাক মডিউল বাড়তি সময়ের খরচ ছাড়াই দ্রুত ভুল ধরে দেয়।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

ভোল বদলেও সমস্যা ও মূল শিক্ষা

এই ভোল বদলেও বেশ কিছু সমস্যা ছিল। এর প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এবং কর্মপ্রবাহ অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ছিল না। ফলে তা অব্যবহৃত থেকে যেত। অন্য যে বিষয়গুলি ছিল, তা হল অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রাখায়, নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে জোর না দেওয়া এবং বিভাগের কিছু অংশ থেকে এটি ব্যবহারের অনীহা।

প্রকল্পের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় ব্যয় হয়েছে দক্ষতা তৈরিতে। জেলের সমস্ত কর্মীদের এর প্রশিক্ষণ দেওয়া রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ ছিল। তবে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি থাকলেও তার সফল বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ নির্ভর করে মানুষের উপর। তাদের আগ্রহ, মানসিক গঠন, প্রকল্প নিয়ে তাদের ভাবনা-চিন্তা এ সব কিছুর উপর। ম্যানুয়াল ব্যবস্থা থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভব ব্যবস্থা যাওয়া বেশ জটিল-কঠিন কাজ। একে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে দফতরের অভ্যন্তর থেকেই নানা বাধা আসে। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।

প্রকল্পের মূল শিক্ষা

কারা ব্যবস্থার ভোল বদল একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়। তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে তা করা সম্ভব। তবে কাম্য সংস্কার করা সম্ভব তখনই যখন মানুষের মন এবং প্রযুক্তির মিলন ঘটবে। ৪৫০ থেকে ৫০০ বন্দির তথ্য রাখা এবং কারা বিভাগে বিশাল প্রশাসনের উপযোগী ব্যবস্থা তৈরি করা যথেষ্ট জটিল কাজ। অনেক সময় বন্দিদের সম্পর্কিত সঠিক রেকর্ডই পাওয়া যেত না।

প্রিজমের মতো এই রকম জটিল ব্যবস্থা কার্যকর করতে একটি সহায়ক পরিবেশের প্রয়োজন। পরাস্পরিক সহযোগিতা, সমন্বয় ছাড়া একে সার্থক ভাবে রূপায়ণ কখনওই সম্ভব নয়। বিশেষ করে আধিকারিক এবং প্রযুক্তির কর্মীদের সমন্বয় বিশেষ জরুরি। প্রিজমের সফল ভাবে রূপায়ণের জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক সদ্দিচ্ছারও প্রয়োজন।

প্রিজমের মতো ব্যবস্থাকে চালু করতে গেলে প্রয়োজন ধারাবাহিক সঠিক প্রকল্প পরিকল্পনা, প্রয়োগ, নজরদারি এবং মূল্যায়ন ব্যবস্থা। বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ এবং প্রকল্পের উপর তাদের প্রতি দিনের নজরদারি এবং নির্দিষ্ট মান বজায় রাখা জন্য প্রকৌশল তৈরি প্রিজমের জন্য জরুরি।

সূত্র: http://nisg.org/files/documents/UP1418303097.pdf

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate