রেশমকীটের জীবনচক্রে চারটি দশা — ডিম, পলু বা লার্ভা, মুককীট বা পিউপা ও মথ। বছরের কয়েকটি নির্দিষ্ট সময়ে রেশমকীটকে তার জীবনচক্রে আবর্তিত হতে দেওয়া হয়। এই নির্দিষ্ট সময়ে এক বার পলু পালনকে বলা হয় বন্দ (ক্রপ)। এই বন্দগুলির গুটি কাটাই করে সুতো তৈরি করা হয়। বছরে ৪ – ৫ টি কয়ার বন্দ (কমার্শিয়াল ক্রপ) ও ৪ – ৫ টি বন্দের পরের কোয়ার বন্দের জন্য ডিম তৈরি করা হয় যাকে বলে সঞ্ঝের বন্দ (সিড ক্রপ)।
পলু পালনের অবশ্য করণীয় কাজ শোধন (ডিসইনফেকশন)
- ১) পলু পালনের আগে ও পরে পলু ঘর ও সমস্ত সরঞ্জাম এবং বাইরের চার পাশ ২% ফরমালিন দ্রবণ বা ২% ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গে ০.৩% গুঁড়ো চুন স্প্রে করে বা ডুবিয়ে শোধন করা দরকার।
- ২) পলুঘরের মেঝে পাকা হলে ব্লিচিং পাউডারের ৪% দ্রবণ দিয়ে মুছে ফেলতে হবে, আর কাঁচা হলে ১০% মিশ্রণ ছেটাতে হবে।
- ৩) বায়ু নিরুদ্ধ পলুঘর ফরমালিন বাষ্প দিয়েও শোধন করা যায়।
- ৪) পলু মুখানোর ১ দিন আগে পলুঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
ডিম বহন
পলুর ডিম সকালে বা সন্ধ্যার পর ঠান্ডা আবহাওয়ায় বহন করতে হবে।
ডিম মুখানো
ডিম যাতে শুকিয়ে না যায় সে দিকে নজর রাখতে হবে।
- (ক) আই স্পট : ডিম মুখানোর দু’ দিন আগে ডিমের গায়ে একটি কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায় যাকে আই স্পট বলে। ডিম আনার পর আই স্পট আসার আগে ডিমকে ২% ফরমালিনে ৫ মিনিট ডুবিয়ে শোধিত ছায়াযুক্ত ঘরে শুকোতে হবে।
- (খ) নীল অবস্থা : আই স্পট দেখা যাওয়ার পরের দিন সমস্ত ডিম নীল আকার ধারণ করে। এই সময় একে একটি বাক্সে রেখে পরের দিন সকালে খুলে দিলে দিনের আলোয় সমস্ত ডিম প্রায় এক সঙ্গে মুখায়।
ডিম ঝাড়া
- ক) ঝুরো ডিমের ক্ষেত্রে সদ্য মুখানো পলুর এক টুকরো মশারির নেটে দেওয়া হয়। এর উপর কচি তুঁতপাতা টুকরো টুকরো করে কেটে ছড়িয়ে দিলে অল্প সময়ের মধ্যে পলুগুলি নেটের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে পাতায় উঠে আসবে। তখন নেট ও পাতা সমেত পলুকে বিভিন্ন ডালাতে স্থানান্তরিত করা হয়।
- খ) কাগজের উপর পাড়া ডিম হলে কাগজের উপর কচি তুঁতপাতার টুকরো ছড়িয়ে দিলে সদ্য মুখানো পলু উঠে আসে পাতার উপর। তখন পলুসমেত পাতাগুলিতে ডালাতে স্থানান্তরিত করা হয়।
পলুকে পাতা সরবরাহ
- (ক) দিনে চার বার, সাধারণত ভোর ৪টে, সকাল ১০টা, বিকেল ৪টে, ও রাত ১০টায় পলুকে পাতা দেওয়া হয়।
- (খ) মেটে কলপে ( প্রথম উপদশা) খুব ছোট করে কাটা পাতা, দো কলপ ও তে কলপে (দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপদশা) একটু বড় করে কাটা পাতা, সোদ ও রোজে (চতুর্থ ও পঞ্চম উপদশা) ডালসমেত পাতা ডালাতে দেওয়া।
- (গ) একে বারে ডগার পাতা বাদ দিয়ে ডগার দিকের কচি পাতা মেটে ও দো কলপে দেওয়া হয়। আর সোদ ও রোজে পলুকে অপেক্ষাকৃত পুষ্ট পাতা দেওয়া হয়।
বেড ক্লিনিং
পলু পালন করার সময় ডালার পরিত্যক্ত তুঁত পাতা, মৃত পলুর মল-মূত্র ইত্যাদিকে কাসার বলে। পলু পালন করতে গেলে মাঝেমাঝে কাসার পরিষ্কার করতে হয়।
- (ক) পলিথিন চাদরে মুড়ে দূরে কোনও সার-গর্তে ফেলতে হয়।
- (খ) সার গাদায়নিয়ে যাওয়ার সময় কাসার যেন কোনও মতেই পলুঘরের মেঝেতে বা রাস্তায় না ছড়ায়।
- (গ) ব্যবহৃত পলিথিন চাদরটি প্রতি দিন ২% ফরমালিন দ্রবণে শোধন করে নিতে হবে।
- (ঘ) কাসার সংগ্রহ করার ও ফেলার ঝুড়ি এবং পাতা তোলা ও পলুকে পাতা সরবরাহ করার ঝুড়ি যেন আলাদা হয়।
- (ঙ) সারগাদায় মাঝে মাঝে ব্লিচিং পাউডার ও চুন ছেটানো দরকার।
- (চ) সারগাদায় কেঁচো সরবরাহ করলে তাড়াতাড়ি পচে।
- (ছ) কাসার করার সময় পরিশোধিত জাল ব্যবহার করতে হবে।
- (জ) প্রত্যেক বার ব্যবহারর সময় ২% ফরমালিন দ্রবণে ১০ মিনিট ধরে জালগুলিকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে শোধন করতে হবে।
- (ঝ) মেটে কলপ, দো কলপ ও তে কলপে ছোট ফাঁকবিশিষ্ট জাল ব্যবহার করা হয়। ওই সময় ঘন ঘন কাসার করলে পলুর হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নীচের তালিকা অনুযায়ী কাসার করা উচিত।
-
পলুর উপদশা
|
কাসার করা দরকার
|
মেটে কলপ
|
এক বার
|
দো কলপ
|
দু’ বার (প্রথমে রহার (মোলটিং) অব্যবহিত পরে ও দ্বিতীয় বার রহা শুরুর আগে)
|
তে কলপ
|
তিন বার (দ্বিতীয় রহার অব্যবহিত পরে, উপদশার মাঝামাঝি ও তৃতীয় রহা শুরুর আগে)
|
সোদ কলপ ও রোজ
|
প্রতি দিন এক বার
|
- (ঞ) সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে, রোজে এক দিন অন্তর কাসার করার পর ও পাতা দেওয়ার আধ ঘণ্টা আগে চুনের বা আরকেও ইত্যাদি গুঁড়ো ছিটাতে হবে।
পলুর ব্যাপ্তিস্থান (স্পেসিং)
- (ক) ডালাতে খুব ঘন করে রাখা পলুর পক্ষে স্বাস্থ্যপ্রদ নয়। তাতে তাদের নাড়াচাড়া বা পাতা খাওয়ার অসুবিধা হয়। পলুর ঠিকমতো বাড়বৃদ্ধি হয় না। তা ছাড়া রোগ হলে রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। পলুপোকা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু করে যা সুস্থ পলু পালনের পরিপন্থী।
- (খ) আবার খুব বেশি পাতলা করলে অহেতুক স্থানের অপচয় হয়। আর পাতাও অহেতুক বোশি লাগে, ফলে পাতার ও অপচয় হয়।
- (গ) সাধারণত কাসার করার সময় পলুকে পাতলা করে রাখা হয়।
- (ঘ) যখন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি থাকে তখন পলুকে পাতলা করে রাখতে হয়। এর ফলে ডালাতে মুক্ত বায়ু চলাচলের সুবিধা হয় এবং ডালার তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কমে যায়। পলু ভালো থাকে।
- (ঙ) সাধারণত পলুর এক উপদশা থেকে ঠিক তার পরের উপদশায় পৌঁছলে পলুর জন্য ব্যপ্তিস্থান দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ করা হয়। ফলে মেটে কলপের থেকে তে কলপের পলুর জন্য স্পেসিং ৮ গুণের বেশি হওয়া প্রয়োজন।
- (চ) এই ভাবে সোদ কলপের জন্য স্পেসিং ২ থেকে তিন বার বৃদ্ধি করা হয়। আবার রোজেও দু’ বার স্পেসিং বাড়ানো হয়। এই ভাবে সদ্য মুখানো পলু থেকে আরম্ভ করে পলু পাকা পর্যন্ত স্পেসিং ৮০ – ১০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।
- (ছ) সাধারণ ভাবে ১০০ ডিমের (১০০টির মথের ডিম) বহুচক্রী (নিস্তারী) পলুর জন্য ৪৮০ – ৫০০ বর্গফুট জায়গা দরকার। আর পলু দ্বিচক্রী হলে ওই জায়গায় ৫০টি ডিমের (৫০টি মথের ডিম) পলু পোষা যেতে পারে।
রহা অবস্থায় সতর্কতা (মোলটিং–এ সতর্কতা)
- (ক) রহা অবস্থায় পাতা দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এই অবস্থায় পলু পাতা খায় না।
- (খ) এই অবস্থায় ডালাতে পলুর উপর চুন, ল্যারেকস, বিজেতা ইত্যাদি ছেঁটাতে হবে।
- (গ) এর পর রহা অবস্থা থেকে নতুন উপদশায় প্রথম বার পাতা দেওয়ার আগে নির্দিষ্ট মাত্রায় চুন বা ল্যবেকস বা বিজেতা ইত্যাদি ছেটাতে হবে।
তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ
স্বাভাবিক আর্দ্রতায় পলুঘরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে সিলিং ফ্যান চালাতে হবে ও জানলায় ভিজে চট বা খসখস লাগাতে হবে। আবার কম থাকলে হিটার বা কাঠকয়লার উনুন ব্যবহার করতে হবে।
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘরের জানলা খোলা রেখে কোণে কোণে শুকনো গুঁড়ো চুন ছড়িয়ে দিতে হবে। আর কম থাকলে খসখস ঝুলিয়ে মেঝেতে ভেজা মোটা কাগজের প্যাড রাখতে হবে।
যদি তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা উভয়ই বেশি হয় তা হলে ঘরের দরজা জানলা খুলে দিয়ে ফ্যান চালাতে হবে।
আবার যদি তাপমাত্রা বেশি অথচ আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হয় তা হলে জানলায় খসখস লাগাতে হবে আর ডালায় পাতার নীচে ও পলুর উপরে প্যারাফিন কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
যদি তাপমাত্রা কম ও আর্দ্রতা বেশি হয় তখন হিটার বা উনুন (ধোঁয়াহীন) জ্বালাতে হবে। যদি উভয়ই কম হয় তখন হিটার/উনুন জ্বালাতে হবে। গামলায় গরম জল রাখতে হবে। পলুর উপযোগী বিবিধ তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা নীচে দেওয়া হল —
দশার নাম
|
উপদশার নাম
|
বহুচক্রী (নিস্তারী) জাত
|
দ্বিচক্রী জাত
|
তাপমাত্রা (ডিগ্রি সেলসিয়াস)
|
আপেক্ষিক আর্দ্রতা (%)
|
তাপমাত্রা (ডিগ্রি সেলসিয়াস)
|
আপেক্ষিক আর্দ্রতা (%)
|
পলু
|
মেটে কলপ
|
২৮
|
৮৫
|
২৭
|
৮৫
|
|
দো কলপ
|
২৭
|
৮৫
|
২৬
|
৮৫
|
|
তে কলপ
|
২৬
|
৮০
|
২৫
|
৮০
|
|
সোদ কলপ
|
২৫
|
৭৫
|
২৪
|
৭৫
|
|
রাজ
|
২৪
|
৭০
|
২৩
|
৭০
|
পিউপা
|
|
২৩–২৫
|
৭৫–৮০
|
২৩–২৫
|
৭৫–৮০
|
মথ
|
|
২৪–২৫
|
৭৫-৮০
|
২৩-২৪
|
৭৫-৮০
|
দশা ও উপদশা ভেদে যে তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা উপরের টেবিলে বর্ণিত হয়েছে উপরের আলোচনায় তাকেই স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা স্বাভাবিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ধরা হয়েছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা বজায় রাখা পলু পালনে অত্যন্ত জরুরি।
রোগ ও তার প্রতিকার
কটা রোগ (পেব্রিন)
রোগ লক্ষণ
- (ক) ডিম কাগজের গায়ে আটকে না থেকে দলা বেঁধে থাকে।
- (খ) পলুর খাওয়ার আগ্রহ থাকে না এবং বৃদ্ধি অনিয়মিত হয়।
- (গ) ডালাতে বিভিন্ন সাইজের পলু দেখতে পাওয়া যায়।
- (ঘ) গুটি করার সময় প্রচুর রেশম নষ্ট করে। শেষে পলু মারা যায়।
- (ঙ) মথ পাশাপাশি ডিম না পেড়ে একটির উপর আর একটি ডিম পাড়ে।
- চ) মথের পাড়া ডিমে মৃত ডিম ও অনিষিক্ত ডিমের সংখ্যা বেশি থাকে।
- (ছ) সংক্রমণ বেশি হলে পলু মুখায় না।
- (জ) পলু ধীর গতিতে নড়াচড়া করে।
- (ঝ) রহা ওঠা অনিয়মিত হয়।
- ঞ) পাতলা আবরণযুক্ত গুটি তৈরি করে।
- (ট) পলুর দেহের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে মধ্যান্ত্রে ডিম্বাকার চকচকে স্পোরের উপস্থিতি এই রোগের নিশ্চিত লক্ষণ।
- (ঠ) পিউপার উদর অঞ্চল ফুলে ওঠে।
- (ড) মাছের দেহের আঁশ উঠে যায়, ডানা ও শুঁড় বিকৃত হয়।
প্রতিরোধ
- (ক) রোগমুক্ত ডিম ব্যবহার।
- (খ) পলু পালনের আগে পলুঘর, আসবাব শোধন।
- (গ) ২% ফরমালিন দিয়ে যথা সময়ে ডিম শোধন।
- (ঘ) আক্রান্ত পলু, মৃত পলু, পলুর মল, ব্যবহৃত পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- (ঙ) পলুর উপযোগী পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পাতা খাওয়াতে হবে।
- (চ) জীবাণুমুক্ত পলুঘর, হাওয়া চলাচল ও সুস্থ শুদ্ধ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
কালশিরা বা ফ্ল্যাচারি
রোগ লক্ষণ
- (ক) পলুর খাওয়ার আগ্রহ থাকে না ও নড়াচড়া কমে যায়।
- (খ) বৃদ্ধি ধীরে হয় ও দেহ নরম হয়ে যায়।
- (গ) রহার পর দেহ দুর্গন্ধ ছড়ায়।
প্রতিরোধ
- (ক) জীবাণুমুক্ত পলুঘর, হাওয়া চলাচল, সুস্থ ও শুদ্ধ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
- (খ) পলুঘরের তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০ – ৮৫% নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- (গ) পলুর বয়স অনুযায়ী পুষ্ট ও পরিষ্কার পাতা সরবরাহ করতে হবে।
- (ঘ) মৃত, আক্রান্ত পলু, ব্যবহৃত পাতা, মল ইত্যাদি পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
- (ন) ঋতু অনুযায়ী সঠিক জাতের পলুর রোগমুক্ত ডিম সংগ্রহ করতে হবে।
পলুর রসা বা গ্রাসেরি
রোগ লক্ষণ
- (ক) পলুর খাওয়ার আগ্রহ থাকে না।
- (খ) দেহ কাণ্ডের অন্তবর্তী অংশ ফুলে ওঠে।
- (গ) দেহ ত্বক চকচকে দেখায়
- (ঘ) পলু ক্রমে ক্রমে অস্থির ও অধৈর্য হয়ে পড়ে।
- (ঙ) দেহ ত্বক ভঙ্গুর হয়ে যায় অর্থাৎ সামান্য স্পর্শেই ছিঁড়ে যায় ও সেখান থেকে সাদা রস (মিল্কি হিমোলিম্ফ) বেরিয়ে আসে।
- (চ) রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পলু উত্তেজিত হয়ে পড়ে, উদ্দেশ্যহীন ভাবে নড়াচড়া করতে থাকে। ডালা থেকে মেঝেতে পড়ে ঘুরতে থাকে। পরে পলুর মৃত্যু ঘটে।
- i) পাকা পলু আক্রান্ত হলে প্রচুর রেশম নষ্ট করে বা পাতলা আবরণ যুক্ত গুটি (ফ্লিমসি) তৈরি করে। পিউপার রূপান্তরিত হওয়ার আগে বা পরে পলুর মৃত্যু ঘটে।
প্রতিরোধ
- (ক) পলুঘরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
- (খ) পলু পালনের আগে ২% ফরমালিন দিয়ে ডিম শোধন করতে হবে।
- (গ) প্রত্যেক রহার পরে পলুকে পাতা দেওয়ার আগে ও রোজে কাসারের পরে পলুর গায়ে ল্যাবেকস প্রয়োগ করতে হবে। আধ ঘণ্টা পরে পাতা দেওয়া যাবে।
- (ঘ) পলুঘরের আদর্শ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।
- (ঙ) মৃত ও আক্রান্ত পলুর মল ও ব্যবহৃত পাতা দূরে কোথাও পুঁতে বা পোড়াতে হবে।
চুনা কাঠি বা মাস্কারডাইন
রোগ লক্ষণ
- (ক) পলুর খাওয়াদাওয়ার আগ্রহ থাকে না।
- (খ) নড়াচড়া করাও ধীরে ধীরে কমে আসে।
- (গ) দেহের স্থিতিস্থাপকতা কমে আসে।
- (ঘ) সংক্রমণে ৩ – ৫ দিনের মধ্যে পলুর মৃত্যু ঘটে।
- (ঙ) পলুর মৃত্যুর পর দেহ আরও শক্ত হয়ে যায়। চকের মতো সাদা রঙ ধারণ করে।
- (চ) পাকা পলু আক্রান্ত হলে কোন মতে গুটি তৈরি সম্ভব হলেও গুটি কেটে মথের বেরিয়ে আসার আগেই পিউপার মৃত্যু ঘটে।
- (ছ) আক্রান্ত পিউপার দেহও শক্ত হয়ে আসে। আক্রান্ত মথেরও দেহ শক্ত হয়।
প্রতিরোধ
- (ক) আদর্শ পলুঘরের ব্যবস্থা করতে হবে।
- (খ) পলু পালনের আগে ও পরে শোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- (গ) আক্রান্ত পলু, মৃত লু ও ব্যবহৃত পাতা সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- (ঘ) প্রত্যেক রহার পর পলুর গায়ে ফরমালিন চাক ও ল্যাবেকস ইত্যাদি ছড়াতে হবে।
- (ঙ) রহা অবস্থায় ডালার অব্যবহৃত পাতা ইত্যাদিকে শুষ্ক অবস্থায় রাখার জন্য ১০০ ডিমের পলুর ক্ষেত্রে ৪ – ৫ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।
- (চ) যদি অন্য কোনও পরিশোধক ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে রহা অবস্থায় পলুর শোধনের জন্য আরও ৩ – ৪ কেজি গুঁড়ো চুন প্রয়োগ করতে হবে।
কীট শত্রু ও তার প্রতিকার
পলুর কীট শত্রুর মধ্যে উজি মাছি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
উজি মাছির হাতে আক্রান্ত পলুর লক্ষণসমূহ
- (ক) প্রথম উপদশা থেকে পঞ্চম উপদশার দু’ এক দিনের মধ্যে আক্রান্ত পলু গুটি তৈরি করতে পারে না। আগেই মরে যায়।
- (খ) পঞ্চম উপদশার শেষ পর্যায়ে আক্রান্ত পলু গুটি তৈরি করতে সমর্থ হয়। তবে ম্যাগটগুলি গুটি কেটে বেরিয়ে আসায় গুটি কাটাই-এর অনুপযুক্ত হয়।
- (গ) উজি মাছির ডিম সাদাটে, ডিম্বাকৃতি ধরনের, পিনের উপরি ভাগের তুলনায় ছোট আকৃতির হয় ও পলুর গায়ে আটকে থাকে।
- (ঘ) পলুর গায়ে ডিম পাড়ার জায়গায় পরে কালো রঙের দাগ দেখা যায়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- (ক) পলুঘরের দরজা, জানলা ও ভেন্টিলেটরে মাছি নিরোধক নাইলন বা তারের জাল লাগানো দরকার।
- (খ) ঘড়ার (রিয়ারিং স্ট্যান্ড) চার পাশে মাছি নিরোধক মশারি লাগানো যেতে পারে।
- (গ) পলুঘরের প্রবেশপথে মাছি ঘরের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- (ঘ) লেভিগেটেড চায়না ক্লের গুঁড়ো চন্দ্রাকী ছাড়ার আগে পলুর গাছে ছিটোতে হবে। এর ফলে ডিম পলুর গায়ে আটকে থাকতে পারবে না। প্রতি ১০০টি পলু ও চন্দ্রাকীর প্রতি বর্গ ফুটের জন্য ৩ – ৪ গ্রাম এই গুঁড়ো দরকার।
- (ঙ) ১ বর্গফুট পরিমিত ডালার পলুর ক্ষেত্রে ১০ মিলি ২% ব্লিচিং দ্রবণ হিসেবে ডালাতে পলুর ওপর স্প্রে করার ব্যবস্থা করতে হবে।
- (চ) সঞ্ঝ এলাকায় যেখানে উজির সংক্রমণ দেখা যায় সেখান থেকে সঞ্ঝগুটি সংগ্রহ করা ঠিক হবে না।
- (ছ) পলুঘরে নিয়মিত ভাবে ম্যাগট, উজি আক্রান্ত পলু, উজির পিউপা সংগ্রহ করে গরম জলে ডুবিয়ে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
- (জ) পলুঘরে উজি মাছিকে দেখা মাত্র মেরে ফেলতে হবে।
তথ্যসূত্র : রেশম শিল্প অধিকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার